স্টাফ রিপোর্টার-
মোবাইল ফোন চুরি বা ছিনতাইয়ের পর মাত্র চার সেকেন্ডে বদলে ফেলা হয় আইএমইআই নম্বর। ফলে হারিয়ে যাওয়া ফোনের মালিকদের ফোন আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়না।
র্যাব বলছে, চীনা একটি অ্যাপ্স ও ডিভাইসের মাধ্যমে খুব দ্রুতই বদলে ফেলা হয় আইএমইআই নম্বর। এরপর সেই ফোনগুলো বিভিন্ন ভ্রাম্যমান দোকানের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করতো একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র। সম্প্রতি এসব চক্রের ২০ জন কে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক হাজারটি চোরাই মোবাইল ফোন। চক্রটি এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের অধিক মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে। কোয়ালিটি ভেদে তারা এসব মোবাইল ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করত।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- হাফিজুর রহমান (৩৫) রনি আহমেদ ইমন (২৯), মোঃ জসিম উদ্দিন (৩৫), মোঃ জামাল উদ্দিন (৫০), আবুল মাতুব্বর (৪২), আহম্মদ আলী (৩৫), মোঃ কামাল (৪০), মোঃ বাপ্পি (২৯), মোঃ আবিদ হোসেন সনু (৩৮), মোঃ রবিন ভ‚ইয়া (২১), মোঃ আরিফুল হোসেন (২২), ইব্রাহিম মিয়া (৪০), মোঃ সুজন (২৯), মোঃ দেলোয়ার (৩৩), মোঃ আব্দুর রহমান (১৯), মোঃ রাজু (২৭), মোঃ জিহাদ হোসেন (২৪), মোঃ মুনাইম (৩৮), মোঃ রাজু (৪৫) এবং রফিক (৩৮)।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গতকাল (১ এপ্রিল) রাতে র্যাব-৩ এর ৪টি অভিযানিক দল রাজধানীর গুলিস্তান, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় ৫৪২টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ৩৪১টি বাটন মোবাইল ফোন, বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার, ০১টি হিটগান, ইলেকট্রনিক সেন্সর ডিভাইস, আইএমইআই পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন টুলস, ছিনতাই এর কাজে ব্যবহৃত ৬টি চাকু, ১টি ল্যাপটপ, ১টি এলসিডি মনিটর এবং নগদ ১১,৬০০/- টাকা।
কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃতরা মূলত ৪টি চক্রে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘ ৫-৬ বছর যাবৎ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এসকল মোবাইল চোরাকারবারির সাথে জড়িত । তারা মোবাইল চুরি, ছিনতাই ও আইএমইআই পরিবর্তনের কারিগর। চক্রটি চোরাই মোবাইল ফোনগুলো বিক্রির জন্য বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করে থাকে। গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমান, রবিন ভুইয়া ও হাফিজুর রহমান মোবাইল ছিনতাই করে পরবর্তীতে চক্রের মূলহোতা রাজু, সুজন ও আবুল মাতুব্বরসহ অন্যান্যদের নিকট স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেয়। এছাড়াও তারা অন্যান্য ছিনতাইকারির নিকট থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন স্বল্প মূল্যে কিনে নিত। গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার এবং আবুল মাতুব্বর মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর। তারা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনগুলোর আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করে। গ্রেফতারকৃত দেলোয়ারের নেতৃত্বাধীন চক্রটি গুলিস্তান এলাকায় সক্রিয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা মোবাইলগুলো বিক্রির সময় ক্রেতাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে আইএমইআই পরিবর্তনের নিশ্চয়তা প্রদান করত। পাশাপাশি তারা মোবাইলের কেসিং, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলত। তারা নিজেরা সকলেই চোরাই এসব মোবাইলের পরিবর্তিত আইএমইআই নম্বরের ফোন সেট ব্যবহার করত। ভালো মানের মোবাইলগুলো তারা মোবাইল মেরামত করার দোকানে বিক্রি করত।
জানা যায়, গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার এর বিরুদ্ধে রাজধানীর বংশাল, শাহবাগ এবং কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।দেলোয়ারের
সহযোগী রাজু এবং জিহাদ এর বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত আরিফুল এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানায় মামলা রয়েছে।গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে মোনায়েম, রফিক ও আরিফুল এর আগেও র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো একই পেশায় লিপ্ত হয়।