স্টাফ রিপোর্টার-
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ১৪ ঘণ্টা পর অবশেষে ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আজ সোমবার ভোররাত ৪টার দিকে ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে এখনো লাইনচ্যুত হওয়া ৯ বগির একটিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রাম পূ্র্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার পর আপ লাইন একেবারেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। বগিগুলোর বেশির ভাগ ডাউন লাইনে ছিটকে পড়েছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুটি রিলিফ ট্রেন উদ্ধার কাজ শুরু করে।
এরপর রাত ৪টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টা চেষ্টার পর ডাউন লাইনের ওপর পড়া বগিগুলো টেনে লাইন থেকে সরানো হয়েছে। এখন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক, বলেন চট্টগ্রাম পূ্র্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই চট্টগ্রামে আটকে থাকা সব ট্রেন ছেড়ে এসেছে। সেগুলো কাছাকাছি আছে। এ ছাড়া লাকসাম থেকে সব ট্রেন নাঙ্গলকোট পর্যন্ত এসে গেছে। একটি রিলিফ ট্রেন ইতিমধ্যে সরে গেছে, আরেকটি সরে গেলে প্রথমে ডাউন কক্সবাজার, ডাউন সূবর্ণা, ডাউন সাগরিকা এবং পরে আপ সোনার বাংলা, আপ কক্সবাজার এক্সপ্রেস চলাচল করবে।
বিজয় এক্সপ্রেস খুব বাজেভাবে লাইনচ্যুত হয়েছে জানিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পুরোপুরি উদ্ধারকাজ শেষ হতে দু’একদিন সময় লাগতে পারে। তবে আপাতত ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার উপযোগী করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, দুই লাইনের ট্রেনই ডাউন লাইন দিয়ে চলাচল করবে। আপ লাইন একেবারেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। নতুন করে লাইন তৈরি করা লাগতে পারে। কবে নাগাদ তা ঠিক করা হতে পারে তা নির্দিষ্ট করে বলা দায়।
এদিকে এ ঘটনায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রবিবার বিকেলে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) মো. সাইফুল ইসলাম এ কমিটি গঠন করেন।
তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল হানিফ, সংকেত ও টেলিযোগাযোগ কর্মকর্তা জাহেদ আরেফীন পাটোয়ারী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) সাজিদ হাসান এবং বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ ও ওয়াগন) সজীব হাসনাত।
প্রসঙ্গত, রবিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে প্রায় ৬শ যাত্রী বহন করে ১৮টি বগি নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরের উদ্দেশে রওনা দেয় বিজয় এক্সপ্রেস। দুপুর দেড়টার দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর তেজের বাজার আসলে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এতে ট্রেনের ৯টি বগি ও প্রায় সাড়ে ৫০০ মিটার রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রামের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এর পর চট্টগ্রাম ও আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রচণ্ড উত্তাপে রেললাইন বেঁকে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে স্থানীয়রা বলছে, রেললাইনের কালভার্টের (ব্রিজ নং ২০৮) উপর ঝুঁকিপূর্ণ স্লিপার ভেঙে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।