করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দিলেও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন কাস্টমস ও ভ্যাট এর কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়। সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। ছুটির মধ্যে জরুরি সেবার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব বন্ধ হয়ে যায়। মহামারির প্রথম থেকেই সীমিত পরিসরে কাস্টমস হাউসগুলো খোলা ছিল। মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ঔষধের কাঁচামাল, চিকিৎসা সামগ্রী খালাসের জন্য খোলা ছিল। পরে ভ্যাট অফিস খোলা হয়।
করোনায় সারা বিশ্ব স্তব্ধ হলেও কর্মদীপ্ত কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে আক্রান্ত বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। দুই বিভাগে আক্রান্ত শুরু হয় মূলত মে মাস থেকে। এ ক‘দিনে দুই বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৯ জন । সংস্পর্শে এসে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বিপুল পরিমাণ কর্মকর্তা-কর্মচারী। রাজস্ব আহরণ আর সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখতে দুই বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মহামারির মধ্যেও যুদ্ধ করছেন। ফলে কখনো সহকর্মী, কখনো স্টেকহোল্ডার, কখনো যাতায়াত করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে একজন কমশিনার, চারজন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ও সাতজন সহকারী কমিশনার রয়েছে । এ যাবত সুস্থ হয়েছেন মোট ২৯ জন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে ০৩ জন মুত্যুবরণ করেছেন যার মধ্যে দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা ও একজন গাড়ীচালক।
অপরদিকে, আক্রান্তের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মরতদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকেই সপরিবারে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত রোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায় বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন থেকে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ কাস্টমস,এক্সাইজ ও ভ্যাট এক্সিকিউটিভ অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন (বাকায়েভ) এবং ঢাকায়েভ এর উদ্যোগে কিছু পিপিই, স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাবস বিতরণ সহ বিভিন্নভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আক্রান্তদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
প্রায় কোন প্রকার ব্যক্তিগত সুরক্ষা ছাড়াই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। কাস্টমস হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেট নিজস্ব উদ্যোগে কিছু সুরক্ষা সামগ্রী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেয়, যা যতসামান্য। কাস্টমস হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তারা জানান, কাস্টমস হাউসে আক্রান্তের মূল কারণ জনসমাগম আর একে অপরের সংস্পর্শে আসা। কাস্টমস হাউসের কাজই হয় জনসমাগমের মাধ্যমে। তবে শতভাগ অটোমেশন হয়ে গেলে সংক্রমণ অনেকাংশে রোধ হতো। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কোন কোয়ারেন্টাইন না থাকায় কর্মকর্তাদের সংস্পর্শে এসে পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। আরো সমস্যার মধ্যে রয়েছে যানবাহন ও সুরক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুলতা। অপরদিকে, ভ্যাট কমিশনারেটেও মোটামুটি জনসমাগম কম হয় না। তবে আক্রান্ত, কিন্তু উপসর্গহীন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, এ জনসমাগমে করোনার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। হাউসের নিজস্ব উদ্যোগে কিছু পিপিই, স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাবস দেওয়া হয়। কিন্তু জনসমাগমের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কর্মকর্তারা। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা কাস্টমস, আইসিডি কমলাপুর, চট্টগ্রাম কাস্টমস ও মোংলা কাস্টমস। বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন চট্টগ্রাম ও ঢাকা কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। কারণ, এ দুই হাউস দিয়ে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি ও খালাস হচ্ছে। এছাড়া দুটি বন্ড কমিশনারেট কর্মকর্তাদেরও সীমিত আকারে কাজ করতে হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়ার দাবি জানান তারা।