নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে সপরিবারে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষ। এদের মধ্যে অনেকেই আর ফিরে আসেন নি। এদের মতই ফরিদপুরের সতীষ চন্দ্র রায় ভারতে আশ্রয় নিয়ে আর দেশে ফেরেননি। তার রেখে যাওয়া ২৪৮ শতাংশ জমি দখলে নিতে মরিয়া একটি চক্র। বিভিন্ন অপশক্তি প্রয়োগ করে এই জমি দলিল মুলে মালিক বনে যাওয়ার চেষ্টা করছে চক্রটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুুর জেলা সদরের তাম্বুলখানা আকইন এলাকার কাঁচনাইল মৌজার আরএস খতিয়ান মুলে খতিয়ান নং ১২৫, জেএল নং ৭৫ এর ২৪৮ শতাংশ জমির মালিক সতীষ চন্দ্র রায়। যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নিয়ে আর দেশে ফেরেন নি কোন দিন। পরবর্তীতে এসএ খতিয়ান মুলে ওই একই জমির মালিকানা পান সতীষ চন্দ্র রায়ের ছেলে রমেশ চন্দ্র রায় ও দেবেন্দ্র চন্দ্র রায়। যার এসএ খতিয়ান নং ১১৪, জেএল নং ৭৫, দাগ নং ২৮২।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালে সতীষ চন্দ্রের দেশ ত্যাগের পর একই এলাকার মৃত আদেল মোল্লার বড় ছেলে মরহুম ওয়াজেদ মোল্লা ওই জমি ভোগ দখল শুরু করেন। তবে কোন রকম মালিকানা তিনি পান নি। বিগত ৫২ বছর যাবৎ ওয়াজেদ মোল্লাসহ তার ছোট ভাই মৃত আমজেদ মোল্লা ও তাদের উত্তরসূরীরা দলিল ছাড়াই ২৪৮ শতাংশ ভোগ দখল করে আসছেন। পরবর্তীতে ওই জমির খাজনা খারিজ না হওয়ায় সরকারের দৃষ্টিগোচরে আসে। পরে বিএস রেকর্ড মুলে পুরো জমির মালিকানা পান সরকারের পক্ষে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক। যার বিএস খতিয়ান নং ১/১, জেএল নং ৭৫, দাগ নং ৩৯৬ ও ৩৯৭।
এখানেই শুরু হয় বিপত্তি। মরহুম আমজেদ মোল্লার উত্তরসূরী আজাহার মোল্লা ও মজিবর মোল্লা নিলামের নামে জমিটির জাল দলিল সম্পন্ন করেন। জাল দলিল নং আইএক্সপি-পি-১ ৪৭৯২/১৪-১৫ এবং আইএক্সপি-পি-৬১৯/১৪-১৫। পরবর্তীতে অসদুপায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ২০১৪-১৫ সালে নামজারিও সম্পন্ন করেন তাদেরই উত্তরসূরী নজরুল মোল্লা, শাজাহান মোল্লা, লেলিন মোল্লা ও মিজানুর মোল্লা।
তবে এই নামজারি জাল দলিলে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করে নামজারি বাতিলের আবেদন করেন স্থানীয় হাসান পারভেজ মোল্লা। এই আবেদন আমলে নিয়েছেন ফরিদপুর এর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
এব্যাপারে নামজারি বাতিলের আবেদনকারী হাসান পারভেজ মোল্লা বলেন, আমার দাদা ওয়াজেদ আলী মোল্লা ১৯৬৯ সালে ওই জমিটি সতীষ চন্দ্র রায় এর কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কিনে নেন। তবে যুদ্ধের সময় দলিল না করে দিয়ে সতীষ চন্দ্র ভারতে চলে যায়। পরবর্তীতে ফিরে এসে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। আর যুদ্ধের সময় জমি রেজিস্ট্রির পরিস্থিতিও ছিল না।
তখন থেকেই জমির ভোগ দখলে আমরাই আছি ।
তিনি বলেন, আধুনিক রাষ্ট্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনের শাসন খুবই জরুরী। এ জন্য নানারকম আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করা হয়েছে। তার পরেও অসাধু চক্রের সদস্যরা বসে নেই। আমি এই জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে সব কিছু জানি। আমি নিজেও ওই পরিবারের উত্তরসূরি হিসেবে ১২৪ শতাংশ জমি ভোগদখল করে আসছি। যেহেতু ওই জমিটির বৈধ মালিক সরকার এবং আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগ দখলে আছি সেহেতু সরকারকে জমিটির মালিকানা নিয়ে আমাদের আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূর্বের মতোই ভোগ দখলের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করছি।
এব্যাপারে ভূমিদস্যু চক্রের মূল হোতা শাজাহান মোল্লার মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায় নি। এমনকি শাজাহান মোল্লার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করলেও বাংলাদেশ বুলেটিন ডটকমকে তিনি ধরা দেন নি।
এ বিয়য়ে ফরিদপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোসাঃ তাসলিমা আলী বাংলাদেশ বুলেটিন ডটকমকে বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম । এ ব্যাপারে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার এর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া মেলেনি ।
সোহেল রানা/ অ