স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে নিয়মিত আদালত চালুর দাবি করে করোনাকালীন সময়ের জন্য সাত দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি (সুপ্রিমকোর্ট বার)।সুপ্রিমকোর্ট বার অডিটোরিয়ামে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ তুলে ধরেন সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
এ সময় সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনসহ কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাগণ এবং সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।লিখিত বক্তৃতায় ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, বিগত ১২ মার্চ থেকে অদ্যাবধি সুপ্রিমকোর্টের নিয়মিত ছুটি এবং ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে দেশব্যাপি সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারনে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ সারাদেশের আদালতে নিয়মিত বিচার কাজ বন্ধ রয়েছে।এ পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের ৩৫ জন আইনজীবী মারা গেছেন।
শতাধিক আইনজীবী অসুস্থ হয়েছেন। এদিকে, দীর্ঘ দিন নিয়মিত কোর্ট বন্ধ থাকায় সাধারণ আইনজীবীরা কোর্ট খোলার দাবি করছেন।তিনি বলেন, এ অবস্থায় সুপ্রিমকোর্ট বার কার্যনির্বাহী পরিষদের মতামতের ভিত্তিতে নিয়মিত আদালত চালুর ব্যাপারে সাত দফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।সাত সুপারিশ:এক. ভার্চুয়াল আদালত নিয়মিত আদালতের বিকল্প হতে পারে না।
সুতরাং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে অনতিবিলম্বে নিয়মিত আদালত চালুর পক্ষে কার্যনির্বাহী কমিটি অভিমত প্রকাশ করেছে।দুই. যেহেতু করোনার ভয়াবহতার কারণে ইতোমধ্যে আদালতের মূল্যবান সময় অপ্রত্যাশিতভাবে নষ্ট হয়েছে।
এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০২০ সালের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টে বাৎসরিক ছুটি এবং সকল আদালতের ডিসেম্বরের ছুটি বাতিল করতে হবে এবং পরবর্তী ঐচ্ছিক ছুটি কমিয়ে আনতে হবে।তিন. নিয়মিত আদালত চালুর পুর্বে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী জনগণ এবং আদালতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।চার. করোনাকালে আদালত প্রাঙ্গনে বিচারক, আইনজীবী, ও বিচার প্রার্থী মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
সকল পক্ষকে এই সুরক্ষা নীতিমালা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।পাঁচ. সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যগণের নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সমিতির টয়লেট, পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।ছয়. যতদিন পর্যন্ত নিয়মিত আদালত ঢালু করা সম্ভব না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত সকল আইনজীবী যেন পেশা পরিচালনার সুযোগ পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
এ লক্ষ্যে বিদ্যমান ভার্চুয়াল কোর্টের সংখ্যা, পরিধি এবং বিচারিক সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমানে চলমান ভার্চুয়াল আদালতে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনজীবীরা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। নিম্ন আদালত থেকে মামলার নথি ও আদেশের সার্টিফাইড কপি না পাওয়ায় উচ্চ আদালতে মামলা দায়েরে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো দূরীকরণে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সাত. বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য ভার্চুয়াল আদালতেও আগাম জামিন চালু করতে হবে।উপরোক্ত বিষয়াবলী সুবিবেচনায় নিয়ে অনতিবিলম্বে সুপ্রিমকোর্টসহ সারাদেশের আদালতসমূহ নিয়মিতভাবে চালু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিমকোর্ট বার সভাপতি এ. এম. আমিন উদ্দিন, সহ-সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান, আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ রাগীব রউফ চৌধুরী, সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ ইমতিয়াজ ফারুক, মোহাম্মদ বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মার-ই-য়াম খন্দকার, হুমায়ুন কবির, আমীরুল ইসলাম (খোকন), মোহাদ্দেস-উল-ইসলাম (টুটুল), মোহাম্মদ মশিউর রহমান, মোহাম্মদ মহসিন কবির, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন (রতন) উপস্থিত ছিলেন।