আপেল সাইডার ভিনেগার আমাদের কাছে একটু কম জনপ্রিয় নাম। কিন্তু এর গুণ মাশাআল্লাহ। খাবার বানানো থেকে রূপচর্চা, রূপচর্চা থেকে চুল, চুল থেকে ওজন কমানো, ওজন কমানো থেকে শরীরে উদ্যম পাওয়া। সব কিছু পাবেন সব গুণ সম্পন্ন আপেল সাইডার ভিনেগারে। এমনকি এটা দিয়ে আপনি তুলতে পারবেন বাসন পত্রে, বাথরুমে লেগে থাকা কঠিন দাগও। এটি এখন মোটামুটি সকল সুপার স্টোর যেমন আলমাস, মিনা বাজার,স্বপ্ন,আগোরা, শপ.সাজগোজ.কম ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার পুরোপুরিভাবে প্রাকৃতিক পণ্য দিয়ে তৈরি করা হয়। আপেলকে দুবার প্রোসেসিং করে তৈরি করা হয় এটি। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করে আমরা প্রতিদিন আস্তে আস্তে কমিয়ে আনতে পারি ঘরে, রান্নায় এবং রূপচর্চায় কেমিকেলের ব্যবহার।
রূপচর্চায় ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপেল সাইডার ভিনেগার
রূপচর্চায় এর ব্যবহার
১. চুলে শ্যাম্পু দেয়ার পর আমরা অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারি। এতে করে চুলে কন্ডিশনিং হবে, তাছাড়া চুলের খুশকি যাবে এবং চুল নতুন করে গজাবে। একটি স্প্রে বোতলে অথবা কোন বোতলে ৩ চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এবং এক কাপ পানি মিশিয়ে রেখে দিবেন। শ্যাম্পু করার পর স্প্রে করবেন পুরো চুলে। (এই ভিনেগার দেয়ার পর চাইলে কন্ডিশন-ও করতে পারেন)।
২. এটি টোনার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। রাতে ঘুমানোর আগে মুখ পরিষ্কার করে টোনারের মত করে তুলো দিয়ে এই ভিনেগার লাগাবেন, তারপর ক্রিম লাগাবেন। এতে করে ত্বকের দাগ চলে যাবে এবং মুখের ব্রণ কমবে।
৩. দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করার জন্য এর কোন তুলনা নেই।
৪. এক কাপ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার গোসলের ১০ মিনিট আগে সারা শরীরে মেখে রাখবেন। এতে করে রোদে পোড়া ভাব দূর হবে। তাছাড়া গোসলের পানিতে দিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। মন প্রফুল্লও হবে, রোদে পোড়া দাগও কমবে।
৫. এটি হাত ও পায়ে ম্যাসাজ করলে দেহের ক্লান্তি দূর হয়।
৬. ছেলেরা এটিকে আফটার শেভ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সমপরিমাণ পানি এবং অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার নিয়ে বোতলে ভরে রাখুন। শেভ করার পর দিন।
৭. প্রতিদিন ত্বকে একে ব্যবহার করলে ত্বকে কোন মরা কোষ থাকে না, ত্বক উজ্জ্বল হয়, বলিরেখা দূর করে, স্কিনের PH-এর সমতা রক্ষা করে, লোমকূপ ছোট করে, মুখে ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ কমে যায়।
৮. মুখের নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ দূর করতে এটি সামান্য পানির সাথে মিশিয়ে গার্গেল করুন।
৯. পেডিকিওর করতে পানির মধ্যে এই ভিনেগার মিশিয়ে করতে পারুন। এতে করে পা পরিষ্কার হবে ভালো করে, পায়ের ত্বক উজ্জ্বল হবে, পায়ের দুর্গন্ধ দূর হবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর ব্যবহার
১০. প্রতিদিন এটি ২ চামচ করে খেলে ওজন কমে। এর প্রধান উপাদান হল অ্যাসিটিক অ্যাসিড, যেটা ওজন কমাতে সহায়তা করে। একটি জরিপে দেখা গিয়েছে একাধারে ১২ সপ্তাহ অ্যাসিটিক অ্যাসিড ওজনের সাথে তলপেটের ফ্যাট কমায়।
১১. অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার পুরো দেহের Ph-এর সমতা রক্ষা করতে সহায়তা করে। যার শরীরে Ph এর মাত্রা কম তার খুব তাড়াতাড়ি যেকোনো রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে এবং দেহে শক্তি অনেক কম থাকে। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের নিয়মিত সেবনে ভিতর থেকে দেহে শক্তি সঞ্চয় হয়।
১২. অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার শরীরের লিভার ভালো রাখে এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।
১৩. যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তারা এক গ্লাস পানিতে ১ চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিলিয়ে খান, খুব তাড়াতাড়ি আরাম পাবেন (যাদের আলসার আছে তাদের জন্য নয়)।
১৪.সর্দির সমস্যা দূর করে
যাদের নাক প্রায় বন্ধ থাকে বা সর্দির সমস্যাতে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাদের জন্য এটি খুব উপকারী। এতে রয়েছে এসেটিক এসিড যা অনুজীব প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন ১ গ্লাস পানিতে ১ টেবল চামচ ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন। এটি সাইনাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
১৫.ডায়রিয়া নিরাময় করে
ব্যাক্টেরিয়া সংক্রামণ এর কারণে যদি ডায়রিয়া হয়ে থাকে তবে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর ১ চামচ সেই ডায়রিয়া নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে। কারণ এর মধ্যে তার জীবাণুধ্বংসী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
১৬.হাঁচি রোধ করতে সহায়ক
১ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আপনার হাঁচি রোধ করতে পারে। এর টক স্বাদ হাচির উদ্রেক প্রতিহত করে।
১৭.দুর্বলতা থেকে পরিত্রাণ দেয়
যখনি কোন ব্যায়াম বা জিম করার পর পেশিগুলোতে শক্তির প্রয়োজন পরে বা অতিরিক্ত পরিশ্রম এর পর যখন শক্তি চাহিদা বেড়ে যায় তখন অ্যাপেল সিডার ভিনেগার শক্তির সঞ্চয় করে, এতে রয়েছে পটাসিয়াম ও বিভিন্ন রকম এনজাইম যা দুর্বলতা থেকে পরিত্রাণ দেয়।
১৮. পায়ের ব্যথাতে উপকারী
অনেকেরই পায়ের নিচের দিকে ব্যথা হয় যাকে লেগ ক্রাম্পস বলে, এটি মুলত পটাসিয়ামের ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে । সেক্ষেত্রে ভিনেগারটি উচ্চ পটাসিয়াম বলে তা উপকারী। তাই ২ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার, ১ চা চামচ মধু গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এছাড়াও এর আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। কোলেস্টেরল কমাতে এবং ডায়েবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমান ঠিক রাখতেও অ্যাপেল সিডার ভিনেগার সাহায্য করে থাকে। তবে যাদের মারাত্তক এসিডিটির সমস্যা আছে তাদের এটি না গ্রহন করাই ভালো।