রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটের মাঠে বহিরাগতদের ঠেকাতে এক বিশেষ ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করতে যাচ্ছে র্যাব। অনসাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ওআইভিএস) নামে নতুন এই নতুন ডিভাইস বহিরাগতদের সহজেই শনাক্ত করবে। র্যাব জানিয়েছে, নির্বাচনি যৌক্তিক কারণ ছাড়া কোনও ব্যক্তি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকার কেন্দ্রে আসলে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়বে।
নির্বাচনের মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও সহিংসতা ঠেকাতে এক সপ্তাহে আগে থেকেই মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সংস্থাগুলো। আর এমন কড়া নিরাপত্তার মাঝেও ঘটছে কিছু ঘটনা, বিভিন্নস্থানে চলছে অগ্নিসংযোগও। ভোটের কেন্দ্রসহ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যানবাহনে। নির্বাচনের একদিন আগে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকার ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ নামে একটি ট্রেনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি নিয়ে মনে দাগ কাটছে অনেকের। এ কারণে ভোটের দিন যেন ভোট কেন্দ্রে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা।
র্যাব জানিয়েছে, মোবাইল ফোন নম্বরের তুলনায় কিছুটা বড় যন্ত্রটিতে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যে কোনও স্থান থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ও অপরাধী শনাক্ত করা যায়। এতে ফিঙ্গার প্রিন্ট (আঙ্গুলের ছাপ), জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর কিংবা জন্মতারিখের তথ্য দিয়ে যে কারও সম্পর্কে সহজেই তথ্য পাওয়া যায়।
যন্ত্রটি তাৎক্ষণিক জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেজ, অপরাধীদের ডেটাবেজ ও কারাভোগের ডেটাবেজের তথ্য দিতে পারে বলেও দাবি সংস্থাটির।
ভোটের মাঠে পুলিশের এলিট বাহিনীটি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থেকে দায়িত্বপালন করবে এবং টহল দলগুলো ওআইভিএসের ডিভাইসটি ব্যবহার করবে; যা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে নির্বাচনি প্রচার এবং ভোটকেন্দ্রের আশপাশে ঘোরাঘুরি না করার জন্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে। ইসির নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে ভোটকেন্দ্র ও এর আশপাশ এলাকায় অনুপ্রবেশকারী বহিরাগতদের পরিচয় শনাক্ত করতে র্যাবের মোবাইল টহল টিম এই ডিভাইসটি ব্যবহার করবে। এ ছাড়া এই ডিভাইসের মাধ্যমে এক এলাকার ভোটার অন্য এলাকায় প্রবেশ করে কোনোধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে কিনা, তা শনাক্ত করে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ঢাকাসহ সারা দেশে ১০ হাজার ৩০০টি কেন্দ্র বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেসব কেন্দ্রে উন্নত ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন দিয়ে নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। দেশের বেশি ঝুঁকির কেন্দ্রগুলো ড্রোন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর জন্য ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন থাকবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে ওইসব ড্রোনের ক্যামেরা থেকে পাওয়া ছবি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচনি কেন্দ্রের আশপাশে থাকবে পুলিশ ও র্যাবের বাড়তি ফোর্স এবং সাদা পোশাকের সদস্য। এছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রিজার্ভ রাখা হচ্ছে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব সদস্য। ইতোমধ্যে দেশজুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ সকাল থেকে রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসেছে চেকপোস্ট। রায়ট কার, জলকামান, দাঙ্গা পুলিশ ও এপিসি কার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘আমরা নির্বাচন ঘিরে তিনটি স্তরে কাজ করেছি। প্রথমটা নির্বাচনের আগে, যেটা আজ থেকে শেষ। দ্বিতীয় ধাপে রবিবার ভোটের দিন যারা ভোট কেন্দ্রে আসবে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া। তারা যেন ভোট দিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারে। ভোটকেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেওয়া। এছাড়া ভোট পরবর্তী সময়ে পরাজিত প্রার্থীরা অনেক সময় ঝামেলা করেন, সংঘর্ষ হয়। সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে।
তিনি বলেন, ভোটের দিন র্যাবের ৭০০ টহল দল কাজ করবে। আমাদের গোয়েন্দারা ও সাইবার টিম কাজ করবে। ডগ স্কোয়াড, বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং বিশেষ প্রয়োজনে র্যাবের হেলিকপ্টার থাকবে। এর বাইরে আমাদের একটি নতুন ডিভাইস আছে; যার নাম ওআইভিএস। এই ডিভাইস দিয়ে এলাকার বাইরে বহিরাগতরা আসলে শনাক্ত করা হবে। এটা শুধু কেন্দ্রের সামনে ব্যবহার করা হবে। যাতে অন্য এলাকার ভোটার আরেক কেন্দ্রে আসতে না পারে তাদের চিহ্নিত করতে এই ওআইভিএস ব্যবহার করা হবে। নাশকতাকারীরা যেন প্রবেশ করতে না পারে। আর নির্বাচনে যৌক্তিক কারণ ছাড়া এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাবেন না।
নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ বাহিনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য পুলিশ বাহিনী ইতোমধ্যে প্রস্তুত। পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে ব্রিফ করেছি। আমরা সবার সহযোগিতায় প্রস্তুতিপর্ব সম্পন্ন করেছি। আমরা সারা দেশের ৪২ হাজার ২৫টি ভোটকেন্দ্র নিরাপদ রাখতে কাজ করে যাবো। গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এবং প্রশাসন সবাই মিলে নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটাতে কেউ যদি কোনও সুযোগ নেয়, তাহলে কঠোরভাবে তাদের দমন করে আইনের আওতায় আনা হবে।’