1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ-ওবায়দুল কাদের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর আজ ২ মাসের মধ্যে বেনজীরের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ হাইকোর্টের কক্সবাজারে ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ৩ বগি লাইনচ্যুত র‌্যাবের নয়া মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত ইসলাম ছয় দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড গমন “নব যৌবন এবং আমাদের সংস্কৃতি “ ন্যক্কারজনক  ঘটনার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন কমিটির পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মানবিকতায়ও নজির স্থাপন করেছে-ডিএমপি কমিশনার কাতারকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান রাষ্ট্রপতির

সাভারে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের আওতায় হচ্ছে ১৫টি পার্ক

  • সময় : বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ২৯৪

সোহেল রানা, ঢাকা: রাজধানী ও আশপাশের এলাকা নিয়ে করা হচ্ছে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ। জরিপ শেষে এই প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে ৭১টি পার্ক করা হবে। যারমধ্যে সাভার উপজেলায় হবে দুই ধরনের ১৫টি পার্ক। এর একটি হবে জল কেন্দ্রীক পার্ক। এলাকার ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং জনঘনত্ব বিবেচনা করে ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে রাজউকের নতুন ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এ। এমনটাই জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সংস্থাটি বলছে, বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা শহরের অতি নিম্ন অবস্থানের অন্যতম প্রধান কারণ অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও অধিক জনঘনত্ব। তাই ঢাকার বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে নাগরিক সুবিধাদি ও পরিসেবার বিপরীতে জনসংখ্যা নির্ধারণ করেই ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে জমি চিহ্নিত করে অধিগ্রহণের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, সাভারের কাউন্দিয়ায় দুটি, আমিনবাজারের বেগুনবাড়ি, পৌর এলাকার বাড্ডা মৌজায় ২৭ একর জমির উপর সাভার পার্ক, দক্ষিণ দরিয়ারপুর মৌজায় ৪৩ একর জমির উপর বংশী পার্ক, ইয়াপুরের দিয়াখালী ও তাজপুর মৌজায় ২০৭ একর জমিতে সাভার আঞ্চলিক পার্ক, পৌর এলাকার ভাটপাড়া, তেঁতুলঝোড়ার মুসুরীখোলা, বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটির পাশে, ইয়ারপুরের তৈয়বপুর, ধামসোনার গনকবাড়ি, পাথালিয়ার মীর্জানগর ও শিমুলিয়ার কলতাসূতী এলাকায় হবে জল কেন্দ্রীক পার্ক।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক নগর পরিকল্পনা অনেকদূর এগিয়ে গেলেও দেশের নগর এলাকায় সঠিক পরিকল্পনার ধারণা এখনও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। বাসযোগ্য নগর গড়তে জনঘনত্ব পরিকল্পনার বিষয়টি উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য নগর এলাকার পরিকল্পনায় এই মৌলিক বিষয়টি অনুপস্থিত। সে কারণে শহর এলাকাগুলো বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা শহর অতি নিম্ন মানে অবস্থানের অন্যতম কারণও এই অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও অধিক জনঘনত্ব।

পরিকল্পনাবিদরা আরও বলছেন, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় জনসংখ্যা, জনঘনত্ব এবং শহরের বিদ্যমান অবকাঠামো ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সাপেক্ষে শহরের ভারবহন ক্ষমতা বিবেচনা না করা হলে যে কোন শহর তার বাসযোগ্যতা হারাবে। ঢাকা যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাই গ্রহণ করা পরিকল্পনা অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করে ঢাকাকে বাঁচানোর তাগিদ তাদের। ড্যাপের জরিপে বলা হয়েছে, একটি বড় শহরের জনঘনত্বের জন্য মানদণ্ড ধরা হয় প্রতি একরে ৭০ থেকে ৮০জন। যা কেন্দ্রীয় শহর এলাকায় সর্বোচ্চ ১২০ পর্যন্ত হতে পারে। জাপানের টোকিও শহরের কেন্দ্রীয় এলাকার ওয়ার্ড সমূহের জনঘনত্ব একরপ্রতি ৯০ জনের নিচে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রতি একরে সর্বোচ্চ জনঘনত্ব ৫৮ জন।

ড্যাপে আরো বলা হয়েছে, সব পরিকল্পিত শহরের জনঘনত্ব প্রতি একরে ৮০ জনের নিচে। নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটনের জনঘনত্ব যেখানে ১১২ এবং অন্যান্য এলাকার ঘনত্ব প্রতি একরে ৬০ এর নিচে। আর এসবের বিপরীতে ঢাকার লালবাগ, বংশাল, সবুজবাগ, গেন্ডারিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার জনঘনত্ব প্রতি একরে ৭০০ থেকে ৮০০ জন বা তার ঊর্ধ্বে। যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু সেখানে অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধা পরিকল্পনার সকল মানদণ্ড ও সূচকে খুবই অপ্রতুল।

এ অবস্থায় নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, যথাযথভাবে জনঘনত্বের বিষয়টি প্রয়োগ না করায় ঢাকা শহরের সরকারি ও বেসরকারি আবাসিক এলাকাগুলোও ক্রমান্বয়ে বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। বসুন্ধরা ও আফতাবনগরসহ অন্যান্য বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে জনঘনত্ব প্রতি একরে ৩৫০ জন ধরে অনুমোদন প্রদান করা হলেও সর্বোচ্চ পার এরিয়া রেশিও (পার) সুবিধা নিয়ে এ সকল এলাকার জনঘনত্ব এখন ৭০০ থেকে ৮০০ পরিণত হচ্ছে। রাজউকের উত্তরা মডেল টাউন প্রকল্পে শুরুতে প্রতি একরে জনঘনত্ব ৯৫ জন করে ধরা হয়েছিল। সে অনুযায়ী নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার কাজ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে উত্তরা এলাকার জনঘনত্ব অনেক বেশি। পূর্বাচল প্রকল্পটির প্রতি একরে ২৪৫ জন ধরে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার কাজ শুরু করা হয়। এ অবস্থায় বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জনঘনত্ব বিবেচনায় নিয়ে ভবনের অনুমোদন দিতে হবে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে শুধু ভবনের সামনের রাস্তার উপর ভিত্তি করে ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করে অনুমোদন
দেওয়া হয়। কিন্তু নগর পরিকল্পনার দৃষ্টকোণ থকে একটি প্লটের উপর নির্মিত ভবনের আকার আয়তন কেমন হওয়া উচিত তা শুধুমাত্র প্লট সংলগ্ন রাস্তার প্রশস্থতার উপর নির্ভর করে না। বরং সেই নগর এলাকার পরিকল্পনা সম্পর্কিত অবকাঠামো ও নাগরিক সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখতে হয়। এরমধ্যে সড়ক অবকাঠামো, সামাজিক সুবিধা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বাজার, উন্মুক্ত স্থান ও খেলার মাঠ, পার্ক, উদ্যান, জলাশয় ও জলাধার অন্যতম। এসব নিশ্চিত হলে ওই এলাকার ভারবহন ক্ষমতা নির্ণয় করে সর্বোচ্চ জনসংখ্যা নির্ধারণ করবার মাধ্যমে সেই এলাকার জনঘনত্ব নির্ধারণ করে প্রতি প্লটে কি পরিমাণ পরিবার বা মানুষকে ধারণ করা যেতে পারে সে ব্যাপারে পরিকল্পনার কৌশল ও পন্থা নির্ধারণ করা হয়। আর প্রস্তাবিত ড্যাপে এসবই সুপারিশ করা হয়েছে।সার্বিক বিবেচনায় ঢাকাকে বসবাস অযোগ্যতার হাত থেকে বাঁচাতে হলে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই বলে মনে করছে ড্যাপ। এছাড়াও ঢাকার খোলা জায়গা, জলাভূমি কমে যাবার ফলে এবং পরিকল্পনামাফিক অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধাদি তৈরি না করবার ফলে জনসংখ্যা ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। তাই এলাকাভিত্তিক জনঘনত্বকে গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারিত জনসংখ্যা ঠিক করতে হবে। তা না হলে সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে বলে মনে করছে রাজউক। সংস্থাটি আরও বলছে, ইতিপূর্বে ঢাকাসহ দেশের পরিকল্পনা এবং আইন ও বিধিমালাগুলোতে জনঘনত্বের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যার ফলে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা অত্যধিক বেড়ে গেছে। একইসাথে পরিবহন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়েছে ।

ড্যাপ পরিচালক ও রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০১৬-৩৫) প্রণয়নে জনঘনত্ব পরিকল্পনার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যা বাসযোগ্য ঢাকা গড়বার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। এই মহাপরিকল্পনায় ব্লক-বেসড উন্নয়ন, মেট্রো স্টেশনের আশে পাশে ট্রানজিট ভিত্তিক উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে জনঘনত্বের ইনসেনটিভ দেওয়ার প্র-বিধান রয়েছে। এছাড়া সময়ের বিবর্তনে একটি এলাকার নাগরিক সুবিধাদি ও সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নতি ঘটলে অধিক জনঘনত্ব প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য গড়ে ৬৫০ বর্গ ফুট আয়তনের ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাবনা এই মহাপরিকল্পনায় রয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেছেন, নানা বাধার কারণে ২০১০ সালের প্রথম ড্যাপ বাস্তবায়ন করা যায়নি। বর্তমান ড্যাপের গেজেট দ্রুত প্রণয়ন করা দরকার। তা না হলে প্রভাবশালীরা বাধা দিতে থাকবে। এরই মধ্যে তার নমুনাও দেখা যাচ্ছে। আবাসন ব্যবসায়ীরা ড্যাপের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের অভিযোগ আবেগ নির্ভর, যুক্তি নির্ভর নয়। এটা দুঃখজনক। ভবনের উচ্চতায় কড়াকড়ি: ড্যাপ প্রণয়ন কমিটি মনে করে, রাজধানীর যেখানে-সেখানে বহুতল ভবন গড়ে উঠলেও এর বাসিন্দাদের জন্য প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেই। একটি বহুতল ভবনে যত যানবাহন যাতায়াত করে, তাতে আশপাশে প্রয়োজনীয় রাস্তা না থাকলে ওই এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। এ রকম অন্যান্য নাগরিক সুবিধারও সংকট আছে। এ অবস্থার নিরসনে আবাসিক বহুতল ভবনের উচ্চতার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

রাজউকের জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীর ৯৯ শতাংশের বেশি ভবন আট তলার নিচে। আর আবাসিক ভবনের মধ্যে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভবনই আটতলার নিচে। যেমন, বংশাল এলাকার তিন হাজার ২৭টি ভবনের মধ্যে ১১ তলা ভবন আছে মাত্র দুটি। ১০ তলা আছে একটি ও ৯ তলা চারটির। আর আটতলা আছে ১৭টি। এক থেকে ছয়তলা ভবনই সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে একতলা সর্বোচ্চ- ৬৬৪টি। শেওড়াপাড়া-কাজীপাড়ায় সাত হাজার ৭২০টি ভবনের চিত্রও প্রায় একই রকম। এমনকি গুলশান-বনানী এলাকায় সর্বোচ্চ সংখ্যক বহুতল ভবন থাকলেও মোট সংখ্যার তুলনায় অনেক কম। আট হাজার ৩৩৯টি ভবনের মধ্যে আটতলা আছে ৬৪টি। ৯তলা ৭৪টি। ২২ ও ১৬ তলা আছে দুটি করে। প্রতিটি এলাকার চিত্র একই রকম। এ জন্য ড্যাপে আবাসিক ভবনের ক্ষেত্রে এলাকা ভেদে ছয় থেকে আটতলা উচ্চতা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য রাস্তার প্রশস্ততা ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধাপ্রাপ্তির বিবেচনায় এই বাধ্যবাধকতায় শিথিলতা রাখা হয়েছে। আর বাণিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ রাখা হয়নি।

ড্যাপ প্রণয়ন কমিটির ডেপুটি টিম লিডার খন্দকার নিয়াজ রহমান বলেন, যেসব ভবন এর চেয়ে বেশি উঠে গেছে, সেগুলো থাকবে। ভবিষ্যতে সেসব ভবন আয়ুস্কাল হারালে তখন নতুন নিয়মে ভবন তৈরি হবে। এটা করার মূল উদ্দেশ্য রাজধানীর জনঘনত্ব কমানো। এ জন্য ভবনগুলোতে ফ্ল্যাটের সংখ্যায়ও নিয়ন্ত্রণ আনা হবে।

মিশ্র ব্যবহারে উৎসাহ: রাজধানীর কয়েকটি এলাকাকে আবাসিক হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হলেও সেটা বাস্তব রূপ পায়নি। এক সময় ধানমন্ডি, গুলশান-বনানী, উত্তরাকে পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এসব এলাকায় এখন নানা বাণিজ্যিক কার্যক্রম যুক্ত হয়েছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক কার্যক্রমও চলছে এসব এলাকায়। এসব মিশ্র এলাকাকে আর আবাসিক হিসেবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আবার মিশ্র এলাকা হলে নাগরিকদের নানা সুবিধাও হয়। উন্নত বিশ্বও এখন মিশ্র এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে নগর পরিকল্পনা করছে। এ জন্য রাজউক মিশ্র এলাকাকে উৎসাহিত করার পরিকল্পনা করেছে সংশোধিত ড্যাপে।

আবাসিক ভবনে পার্কিং বাধ্যতামূলক নয়: বর্তমানে যে কোনো আবাসিক ভবনের নকশা অনুমোদনে ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী বা নিচতলায় পার্কিং স্পেস থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সংশোধিত ড্যাপে নিচতলার পার্কিং থাকার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কেউ চাইলে পার্কিং রাখতে পারবেন। কিন্তু যেহেতু প্রতি বছর সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ নতুন করে রাজধানীতে স্থায়ীভাবে যুক্ত হচ্ছে, পার্কিংয়ের বাধ্যবাধকতা তুলে দিলে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে বলে মনে করে রাজউক।

রাস্তার প্রশস্ততা হবে সর্বনিম্ন ৮ ফুট: এবার ড্যাপে রাস্তার প্রশস্ততা সর্বনিম্ন ৮ ফুট নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে ছিল ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি। তবে রাস্তা ৮ ফুটের চেয়ে কম প্রশস্ত হলে সেখানে দোতলার বেশি ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রেও জমির মালিককে আরও দুই ফুট জায়গা ছেড়ে সামনের রাস্তাকে ১০ ফুট প্রশস্ত করতে হবে। এর কম হলে একতলার বেশি ভবনের অনুমতি মিলবে না।

বন্যাপ্রবাহ এলাকায় রাস্তা নয়: এতদিন ড্যাপে বন্যাপ্রবাহ অঞ্চলে রাস্তা তৈরির সুযোগ ছিল। এবার সেটা বন্ধ করে সেখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা ফ্লাইওয়ার তৈরির কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ড্যাপ আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় তৈরি করা এ ধরনের রাস্তা অপসারণ করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে আশুলিয়া ও সাভারের ধউর পর্যন্ত বন্যাপ্রবাহ অঞ্চলের তিন কিলোমিটার সড়ক অপসারণ করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করতে বলা হয়েছে।

থাকবে না কালভার্ট-বক্স কালভার্ট: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খাল ভরাট করে কালভার্ট ও বক্স কালভার্ট তৈরির কারণে ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। তাই সব কালভার্ট ও বক্স কালভার্ট তুলে দিয়ে সেখানে নাব্য ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। এতে ড্যাপ এলাকায় নতুন ৫৬৬ কিলোমিটার নতুন নৌপথ সৃষ্টি হবে। এসব নৌপথে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু করলে রাজধানীর যানজট এবং জলাবদ্ধতারও নিরসন হবে। এ ছাড়া যানজট নিরসনে দুই হাজার ৭৪৮ কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরির কথাও বলা হয়েছে।

প্রতি ওয়ার্ডে তিন-চারটি সরকারি স্কুল: রাজধানীতে বাচ্চাদের লেখাপড়ার জন্য পছন্দ মতো স্কুল পাওয়া ও শিক্ষা ব্যয় নির্বাহ করা নগরবাসীর জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার অবসানে ড্যাপ এলাকায় ৬২৭টি স্থানে সরকারি বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ থাকবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। এতে সন্তানের শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের মাথাব্যথা কমবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে এ রকম তিন থেকে চারটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে। স্কুলের সঙ্গে থাকবে খেলার মাঠ।

ছোট অসুখে বড় হাসপাতাল নয়: পরিবারের কারও ছোটখাটো অসুখ হলেই বড় হাসপাতাল বা প্রাইভেট ডাক্তারের চেম্বারে ছুটতে হয় নগরবাসীকে। কিন্তু প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ছোট প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থাকলে এই ভোগান্তি এবং সময় ও অর্থের অপচয় থেকে মানুষ রেহাই পেতে পারে- এ বিবেচনায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের কথা বলা হয়েছে ড্যাপে।

খেলার মাঠের নিচে জলাধার: রাজধানীতে নতুন করে জলাধার তৈরির জায়গা সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় খেলার মাঠগুলোকে ১০ ফুট গভীরতায় খুঁড়ে নিচে পাথর-বালু দিয়ে একটি ফাঁপা ধরনের জলাধার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে ড্যাপে। এর ওপর থাকবে স্বাভাবিক খেলার মাঠ। বৃষ্টি হলেই ক্যাসপিটের মাধ্যমে পানি ওই ফাঁপার ভেতরে ঢুকে যাবে। ফলে ওইসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হবে না। এ রকম ৭৫টি জলাধার তৈরি করা হবে। পুরান ঢাকার লালবাগের আব্দুল আলীম পার্কের জলাবদ্ধতা রোধে পার্কের চারপাশের ওয়াকওয়ের নিচে এ রকম জলাধার তৈরি করে ভালো ফল পাওয়া গেছে বলে জানান ড্যাপ প্রণয়ন কমিটির সদস্য নগর পরিকল্পনাবিদ হিশাম উদ্দিন চিশতি। এ ছাড়া বিনোদনের জন্য পাঁটটি আঞ্চলিক পার্ক, ৪৯টি জলপার্ক, পাঁচটি ইকো পার্ক ও আটটি ছোট আকৃতির পার্ক তৈরির কথা বলা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪