বিপুল মিয়া, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বোরো ধানে মুড়ি ফসল (Ratoon Crop) কৃষি ক্ষেত্রে এক সম্ভাবনাময় প্রযুক্তির নাম। বোরো ধান কর্তনের সময় ৫/৬ ইঞ্চি নাড়া রেখে উক্ত জমিতে পরিমাণ মতো সার ও পরিচর্যার মাধ্যমে মুড়ি থেকে ধান উৎপাদন করা যায়। আমাদের দেশে বেশিরভাগ জমিই বোরো ধান কর্তনের পর অব্যবহৃত থাকে। পানি ধারণ করতে সক্ষম এমন বোরো ধানের জমিতে মুড়ি ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষক অতিরিক্ত ফসল ঘরে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে কৃষকের খরচের পরিমাণ একদমই কম। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন ব্লকে প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে মুড়ি ফসল উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বোরো মৌসুমে জমিতে লাগানো ধান গাছ কেটে নেওয়ার পর অবশিষ্ট ধান গাছের গোড়ার পরিচর্যা করে ফের ধান উৎপাদন করে বাড়তি ফসল ঘরে তুলেছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ আর মাঠ পর্যায়ে প্রতিটি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় স্বল্প খরচ আর পরিচর্যায় একই জমি থেকে দ্বিতীয়বার ফসল পেয়ে খুশি কৃষকেরা। আর এমন পদ্ধতিতে ফসল প্রাপ্তিতে মুড়ি থেকে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। কৃষি অফিসের সার্বক্ষণিক সহযোগিতায় এ পদ্ধতিতে ধান উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষিতে নতুন এক অধ্যায়ের সফল সূচনা হয়েছে।
উপজেলার বড়ভিটা ব্লকের মুড়ি ক্ষেত থেকে ফসল উৎপাদনকারী কৃষক আব্দুল খালেক দুলাল বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শ আর উপসহকারী কৃষি অফিসারের নির্দেশনায় বোরো ধান কাটার সময় জমিতে ৪/৫ ইঞ্চি নাড়া রেখে কেটেছি, ধানকাটার ৭-১০ দিনের মধ্যে বিঘা প্রতি ৭ কেজি ইউরিয়া, ৫ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার উপড়ি প্রয়োগ করেছি। এরপর জমির বড় আকারের আগাছা পরিষ্কার করেছি। স্বল্প খরচ আর অল্প পরিচর্যায় মাত্র ৪৭ দিনের মাথায় জমির ধান পেকেছে। আশা করি বিঘা প্রতি ৫/৬ মণ ধান পাব। ফসল উৎপাদনে সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্যে আমি উপজেলা কৃষি অফিসের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আগামীতে আমি ব্যাপকহারে এ চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করবো। এ পদ্ধতি ব্যবহারে আমার সফলতা দেখে আমার এলাকার অনেকেই এ পদ্ধতিতে ধান চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবুর রশীদ বলেন, বোরো মৌসুমে ধান কাটার সময় উপজেলার প্রতিটি ব্লকে অধিক পরিমাণ কুসি ছাড়তে সক্ষম জাত ও যেসব জমিতে ২/৩ ইঞ্চি পানি জমে থাকে এমন জমি বাছাই করে কিছু কৃষককে পরামর্শ দিয়ে প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে মুড়ি ক্ষেত পরিচর্যায় বিঘা প্রতি ৫/৬ মণ ফলন পাওয়া গেছে। প্রথমবারেই এ পদ্ধতিতে অল্প খরচ আর পরিচর্যায় ফসল উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় আগামী মৌসুমে এ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকরা আগ্রহী হয়েছেন। এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করে কৃষকেরা যেমন লাভবান হচ্ছেন পাশাপাশি দেশের খাদ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে। তাছাড়াও কৃষকরা বাড়তি ধান উৎপাদনের সাথে খড়ও পাচ্ছেন যা গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাচ্ছে। আগামী মৌসুমে এ পদ্ধতি ব্যাপকহারে ব্যবহার করতে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।