সাধ ও সাধ্যর মধ্যে হিসেব মিলাতে হিমসিম খাচ্ছে পাবনার মধ্যবিত্ত নিম্ন-মধ্যবিত্তরা।করোনাকালে তারা ত্রানে লাইনে দাঁড়াতে পারেনি, সংসারে খরচ মেটাতে তাদের অদৃশ্য কান্না ফুটে ওঠেনি।
মাসের শেষে বিদ্যুৎ বিল, বাড়ি ভাড়া, দোকান ভাড়া সন্তানদের স্কুলের বেতন সহ সংসারে যাবতীয় খরচ ভেবে কপালে অনিশ্চয়তার ভাঁজ পড়েছে সুজনের (ছদ্মনাম)। তিনি একজন ছোট উদ্যোগতা।প্রায় বছর দু’য়েক পাবনা শহরে দোকান ভাড়া নিয়ে জামা কাপড় বিক্রি করেন। স্বল্প পুজি নিয়ে মোটামুটি চলছিলো তার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পরপরি বেচাবিক্রি অনেকটাই কমে যায়।
পরে পাবনা শহর অঘোষিত লকডাউন করা হলে প্রায় দু’মাস বন্ধ হয়ে যায় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান।গেলো ঈদুল ফিতরের বেচাকেনা করতে পারেনি সুজন এই সময়টায় তার জমানো সঞ্চয়ের টাকা ভেঙে সংসারের চাহিদা পূরণ করেছেন তিনি,এখন দোকান খুলে সীমিত বেচাকেনা করলেও সেই ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি, মাস শুরু হতেই হিসেব মিলাতে দিশেহারা সে বলছিলেন, সুজন।
শহরের নবনির্মিত একটি মার্কেটে ভাড়ায় নতুন কাপড়ের দোকান দিয়েছিলেন পৌর এলাকা গোবিন্দার সানজিদ,করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার দুই মাস পরে দোকান ভাড়া দিতে পারেনি অবশেষে এখন ফুটপাতে দোকান সাজিয়েছেন সানজিদ।
শহরে ফুল বিক্রির দোকানে অনেকটাই কমে গেছে কেনাবেচা। করোনা পরিস্থিতিতে জাতীয়, সামাজিক পারিবারিক অনুষ্ঠান না থাকায় ফুল বিক্রি নেই।
খরচ পোষাতে না পেরে দোকানের কর্মচারীদের ছুটি দিয়েছেন কেউ কেউ।
একই সমস্যা ডেকোরেটর মাইক প্রিন্টিং রেন্ট এ কার সহ বেশকয়েকটি স্বল্পআয়ের ও মধ্যআয়ের পেশার মানুষের।
পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বিষয়টি নিয়ে বলেন, মধ্যবিত্তরা কারো কাছে হাত পাততে পারেনা। করোনাকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত এসব স্বল্প আয়ের উদ্দোক্তাদের সরকারি প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের থেকে তাদের ঋণ সহায়তায় করা হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া পর থেকেই স্কুল বন্ধ অথচ পাবনা শহরে কালেক্টর স্কুল, জাগির হোসেন একাডেমি সহ বেশ কয়েকটি স্কুলে কোমলমতি শিশুদের বেতন দিতে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সংসার চালানোর পাশাপাশি এতে নিম্মআয়ের মানুষদের চরম চিন্তার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। আবার দ্বিমুখী আর্থিক সমস্যায় আছেন অনেক স্কুলের শিক্ষকরাও। একদিকে স্বল্প আয়ে মানুষ সংসারের ব্যায় মেটানো পাশাপাশি সন্তানের স্কুলের বেতন দিতে যেমন সমস্যায় রয়েছেন তেমনি অনেক শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছেনা স্কুল কতৃপক্ষ।
এ বিষয়ে পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি প্রবীন সাংবাদিক আব্দুল মতীন খান বলেন, সেসব স্কুল সরকারি বা এমপিওভুক্ত না সে সকল স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি
শিক্ষকরাও করোনাকালীন সময়ে আর্থিক সমস্যায় আছে। তবে পাওনা বেতন গ্রহন আর বেতন প্রদানের সামর্থ্যর সমন্বয় করে উভয় পক্ষকেই মানবিক সমাধানে আসতে হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, দুই থেকে চার ডলার প্রতিদিনের আয় হলেই মধ্যবিত্ত গণ্য করা যায়।সেই হিসেবে যার মাসিক আয় ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা সেই মধ্যবিত্ত৷ এটা বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ ভাগ৷ ১৬ কোটি মানুষের হিসেবে সংখ্যাটি দাঁড়ায় চার কোটি ৮০ লাখ বলে মনে করেন জার্মান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম,ডয়চে ভেলে।