টাঙ্গাইল প্রতিনিধি –
সরকারের একান্ত প্রচেষ্টায় গত কয়েক বছরে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ গ্রাহক যেমন বেড়েছে; তেমনি বিদ্যুৎ ব্যবহারে ঝামেলাও বেড়ে গেছে।
দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং, প্রিপেইড মিটার, ভুতুড়ে বিলসহ নানা সমাস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন গ্রাহকরা। বিশেষ করে, বিল সংক্রান্ত ঝামেলা আর প্রিপেইড মিটারের ঝামেলা যেন বেড়েই চলেছে। এর মধ্য বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বিলের সঙ্গে মিটার ভাড়াও সংযোজন করে দিয়েছে।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ ১ ২ ও ৩ ওর কিছু এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে বলা যায় পুরো দেশের সাথে টাঙ্গাইল জেলায় সাধারণ জনগণের ভোগান্তির আরেক নাম বিদ্যুৎ মিটার। প্রিপেইড মিটারের দাম ধরা আছে ১৬০০ টাকা। প্রতি মাসে ৪০ টাকা করে কেটে নিলে ৪০ মাসে সে টাকা পরিশোধ হওয়ার কথা। কিন্তু ১৬০০ টাকা পরিশোধ হওয়ার পরও বছরের পর বছর প্রতি মাসে ৪০ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়। এর সদুত্তর জানেন না খোদ কর্তৃপক্ষও।
সরেজমিনে ঘুরতে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন গ্রাহকের সাথে। তাদের জমির ভিতর খুঁটি লাগিয়ে তার টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গ্রাহক মতিউর মাষ্টার বলেন ‘ বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘জানি কথা সত্য কিন্তু সাক্ষী দুর্বল’ এজন্য মামলা খালাস। নিজের টাকায় মিটার কিনে মাসে মাসে তার ভাড়া দিতে হয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে। এটা কেমন কথা । ‘হয় মিটার ভাড়া মওকুফ করতে হবে, নয়তো আমাদের জমির ভাড়া দিতে হবে’। কারণ জমির ওপরে খাম্বা বসিয়েই তো ব্যবসা করছে। নগদ টাকায় মিটার কিনে নিজের ঘরের দেওয়ালে লাগিয়ে যদি ভাড়া দিতে হয়। তাহলে আমার জমিতে বিদ্যুতের খুঁটি ফ্রি থাকবে তা তো হবেনা ।
গ্রাহক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নিজের টাকায় বিদ্যুতের মিটার ক্রয় করার পরও যদি প্রতি মাসে মাসে কতিথ প্রিপেইড মিটারের ভাড়া দিতে হয়। তাহলে বিদ্যুৎ সংস্থা আমাদের জমিতে বিদ্যুতের খুঁটি পুতে লাইন টানিয়ে ফসলি জমিগুলো নষ্ট করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে। তাতে আমাদের অংশিদারিত্ব আছে। তাহলে আমরা জমির ভারা পাবোনা কেন?
গ্রাহক অধ্যাপক শহিদুজ্জামান বলেন ,’ বিদ্যুৎ বিলের নামে সরকার যে প্রতি মাসে কয়েকশ’ কোটি টাকা ডিমান্ড চার্জ, মিটার ভাড়া এবং ভ্যাট আদায় করছে। তা ভর্তুকির চেয়ে অনেক বেশি বলে গ্রাহকরা মনে করেন। কোনো বিদ্যুৎ খরচ না করলেও ১০০ টাকা বিদ্যুতের মূল্য, ৫০ টাকা ডিমান্ড চার্জ এবং ২০ টাকা মিটার ভাড়া দিতেই হবে। প্রিপেইড মিটারে ভাড়া ৪০ টাকা, মেইন মিটার ২৫০ টাকা, কারণটা কী? এভাবে বিদ্যুৎ বিলের নামে গ্রাহকের পকেট কাটার মানে কি? একজন ক্ষুদ্র গ্রাহক যিনি ৫০ ইউনিট বা তার কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তাঁকেও কমপক্ষে ৭০ অথবা ৯০ টাকা দিতেই হবে। যাকি না একজন বড় ভোক্তার জন্যও পরিমাণে এক। এটা হাস্যকর এবং দুঃখজনক। মিটার ভাড়া না হয় বোঝা গেল। কিন্তু ডিমান্ড চার্জ কী? কিসের ডিমান্ড এবং তা ধনী-গরিব সবার জন্য সমান কেন? তিনি আরো বলেন,’যে ভোক্তা ১০০০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করেন। আর যে দরিদ্র লোকটি ১০ ইউনিট ব্যবহার করেন। তাঁরা দু’জনেই ৫০ টাকা দেবেন কোন যুক্তিতে? সঠিক বিল আদায় এবং অপচয় রোধ করার জন্য নিজেদের স্বার্থে পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো, নেসকো মিটার স্থাপন করেছে। আর তার ভাড়া আদায় করছে গ্রাহকদের কাছ থেকে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বৈদ্যুতিক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের কী অদ্ভুত আয়োজন! তাই এসব অযৌক্তিক চার্জ পরিহার করে ইউনিট প্রতি মূল্য বাড়িয়ে হলেও সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে পারে। তাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ভোক্তাদের বিদ্যুৎ বিল বাড়লেও আগের তুলনায় মোট বিল কমে যাবে, বাড়বে না। বিদ্যুৎ বিলের ভৌতিক ভোগান্তি থেকে গ্রাহকরা রক্ষা পাবে।’