মো: ইসরাফিল আলম রাফিলশিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা:

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন আটটি ধাপে ২৭ মার্চ প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে । নির্বাচনকে  ঘিরে দেশে  চলছে আলোচনা ও সমালোচনা।  আলোচনায় দুটি দলের নাম উচ্চ স্বরে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। বর্তমান ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল কংগ্রেস চাইছে আবার রাজ্য ক্ষমতা তার চিহ্নে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুক পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। অন্যদিকে জয়ী হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে বিজেপি । আলোচনায় না থাকলেও বামফ্রন্ট জোট যুক্ত জাতীয় কংগ্রেস ও আইএসএফ  তৃনমূল কংগ্রেসকে খুব ভাবিয়ে তুলছে। 
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। রাজশাহী, যশোর, রংপুর সীমান্তে বিশেষ করে বেশি বাংলাদেশী মৃত্যু হয়। তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি বিধানসভা নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় বিভাজন রাজনীতি  বাংলাদেশ আলোচনা মুখ্য বিষয় । সর্বোপরি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্য হিসেবে সম্পর্ক  বা বন্ধুত্ব শক্তিশালী রাখা প্রয়োজন।
আলোচনায় তূনমূল কংগ্রেস জনপ্রিয়তা লোক মুখে পশ্চিমবঙ্গে কেবল মমতা ব্যানার্জি জয়গান। ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা বর্তমান মূখ্যমন্ত্রী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রাখছে। দুইবারের মুখ্যমন্ত্রী ,সাত বারের সাংসদ  যেকোনো সংকটময় সময়ে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত ও গুণাবলী থাকা মমতা ব্যানার্জিকে এগিয়ে রাখছে। জীবন ধারনের স্বাভাবিক বিলাসিতা তার মূখ্য। একজন প্রধান হওয়ার যোগ্যতা একটি দলকে শক্তিশালী করে তুলেছে। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান পাশাপাশি লেখিকা হিসেবে খুব জনপ্রিয় মমতা ব্যানার্জি। তিনি শিশুদের জন্য বই সহ এখন পর্যন্ত মোট ৭৯ টি বই লিখেছেন। লেখিকা হিসেবে বই মেলায় তার বই ‘বেস্টসেলার ‘ হয়। সর্বশেষ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী আসনে বসেন। ধারাবাহিকতায় আবারো জনগনের আস্তায় বিজয়ী হওয়ার সময় গুনছে কেবল তার দল।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরা, আসাম মতো নিজেদের করে নিতে চাচ্ছে বিজেপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক  বলছে, বিজেপির রাজনৈতিক আদর্শের গুরু হেমপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জন্মশতবার্ষিকী। তার জন্ম পশ্চিমবঙ্গে , পাখির চোখের মত বিজেপি জয় উপহার দিতে চায় জন্মশতবার্ষিকীতে। সম্প্রতি  নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে সফরে এসে মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ওড়াকান্দি গিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনে মতুয়া ভোটারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নির্বাচনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসনের ফলাফল মতুয়াদের ভোটে প্রভাবিত হয়। নরেন্দ্র মোদী মতুয়াদের তীর্থস্থান সফর করার কারন হিসেব পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন বলছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সর্বশেষ ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে জয় পায় বিজেপি। ফলে বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন না করা পর্যন্ত বিজেপি বিশ্রাম নেবে না পশ্চিমবঙ্গ থেকে। অমিত শাহ ইতিমধ্যে বলেছেন, এই “যুদ্ধ” কেবল মমতাকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য নয়, রাজ্যটিকে “সোনার বাংলা” হিসেবে গড়ে তোলার জন্যেও।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচন ঘিরে আলোচনায় ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী।     ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে গেছেন। পিছিয়ে পড়া আদিবাসী, মুসলিম সবার  অধিকার আদায়ের জন্য তার দল আইএসএফ বামপন্থী ও জাতীয় কংগ্রেস সাথে জোট করে নির্বাচনে আসছে। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটার ২৭% বেশি। আব্বাস সিদ্দিকী নির্বাচনে মুসলিম ভোটের অংশীদার রাখে। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম শক্তি ছিলো মুসলিম ভোটার। এ বছর ‘ভাইজান’ খ্যাত আব্বাস সিদ্দিকী কারনে মমতা ব্যানার্জি মুসলিম ভোট হাতছাড়া হলে তৃণমূল কংগ্রেস অনেকটা ক্ষতি সম্মুখীন হবে। যতটা তূণমূল কংগ্রেস ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিজেপি জন্য ততটা ভালো খবর বহন করবে। নির্বাচন ঘীরে আলোচনায় থাকছেই আব্বাস সিদ্দিকী। 
অস্তিত্ব সংকট উত্তরণে অবশেষে জোট হয়ে নির্বাচনে আলোচনায় রয়েছে বামপন্থীরা। বামপন্থীদের দুটি দল সিপিআই ও সিপিএম অবশেষে একত্রিত হয়েছে সংকট নিরসনে। দাপটের চলা বামপন্থী দল নিজেদের অতীত ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে আছে। বৃহৎ কমিউনিস্ট আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনে বামপন্থীরা ৩২ টি আসন পেয়েছিলো। সব পেরিয়ে নতুন ভাবে জোট হয়ে নতুন কিছুর আশায় আছে বামপন্থীরা। 

পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের দুর্দিন চলছে। দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করছে নেতাকর্মীরা যা ভাবিয়ে তুলছে দলটিকে। সর্বশেষ নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেস ৪৪ টি আসন পেলেও নির্বাচিত সাংসদরা দল থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। মূলত সুযোগ সুবিধা বিবেচনা করে এমন ভাঙ্গন কারন মনে করা হচ্ছে। মমতা ব্যানার্জি হুশিয়ারি বক্তব্য বাস্তবায়ন রুপ দেখা দিয়েছে দলটিতে। শুধু কেবল পোস্টার রয়েছে কোন নেতা নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় কংগ্রেসকে পশ্চিমবঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। দুর্দিন কাটিয়ে উঠতে জাতীয় কংগ্রেস জোট বেঁধেছে বামপন্থী ও আইএসএফ সাথে। নতুন করে সুগঠিত হওয়ার প্রত্যাশায় আছে। 

পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশে হচ্ছে আলোচনা। বাংলাদেশের সরকার সাথে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সম্পর্ক আমরা জানি। অপরদিকে মমতা ব্যানার্জি সাথে সরকারের সম্পর্ক অনেক ভালো।  তবে বিজেপি সরকার এনআরসি বাস্তবায়ন ও ধর্ম ভিওিক রাজনীতি শুরু করে তবে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আসংখ্যা  রয়েছে। দিল্লিতে মুসলমানদের উপর নির্যাতনের কারনে দেশে মোদি সফর বাতিল জন্য দেশের মুসলিম জনতা রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হতাহতের ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়। অপরদিকে তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি রাজ্য সরকার মমতা ব্যানার্জি জন্য হচ্ছে না তা আমরা জানি। সীমান্ত হত্যা যেনো নিয়মিত ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।  
দেশের মানুষ মতে কেউ চাচ্ছে না নতুন কেউ পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকার গঠন করুক। ২রা মে  যে দল রাজ্য সরকার গঠন করুক প্রতিবেশী দেশ হিসেবে তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।