1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নারীদের ব্যবহার করে বিদেশে টাকা পাচার করতেন গান-বাংলার তাপস  ‘কেমন পুলিশ চাই’জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হাইকমিশনে হামলা জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ- বিএনপি মহাসচিব পার্শ্ববর্তী দেশের গণমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা খবর প্রচার করছে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মার্চে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ-ইসি পার্বত্য অঞ্চলকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়-প্রধান উপদেষ্টা নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রথম বৈঠক আজ প্রধান উপদেষ্টার  নিকট  ‘অর্থনীতির শ্বেতপত্র’ হস্তান্তর খুনের পরিকল্পনা আগেই জানতো পুলিশ, ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু দেশের ক্রান্তিকালে সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে-সেনাপ্রধান

বিপ্লবী চেতনার চির-তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য

  • সময় : সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২১
  • ২৮০

নুর এ আলম
১১-০৫-২০১১

কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়: পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি…
এরকম অভূতপূর্ব উপমার পাশাপাশি বিপ্লবী অভিব্যক্তি দিয়ে যিনি কবিতার বুনন গেঁথেছেন, তার নাম সুকান্ত ভট্টাচার্য। তারুণ্যের প্রথম বেলায়ই কবিতাকে ছুটি দিয়ে অকালে পরপারে চলে যান। 

১৯৪৭ সালের ১৩ মে বাংলা সাহিত্যের অসামান্য জনপ্রিয় এবং শক্তিমান কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য মাত্র ২১ বছর বয়সে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে (যক্ষা) আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

কবি সুকান্ত ভটাচার্যের জন্ম ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতার কালীঘাটের মহিম হালদার স্ট্রিটের মাতামহের বাড়িতে। তবে তার পৈত্রিক নিবাস ছিল পূর্ববাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) কোটালীপাড়া থানার উনশিয়া গ্রামে। মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ এইর কবির বাবা নিবারণ ভট্টাচার্য কলকাতায় বইয়ের ব্যবসায করতেন। মা সুনীতি দেবী ছিলেন গৃহিনী। 

সুকান্তের বাল্যশিক্ষা শুরু হয় কলকাতার কমলা বিদ্যামন্দিরে; পরে তিনি বেলেঘাটা দেশবন্ধু হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। এ সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। 

কবি সুকান্তের স্বল্পস্থায়ী জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়িতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়ীটিতে এখনো বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাস ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের নিজের ভাইয়ের ছেলে।

সুকান্ত ভট্টাচার্য কলম ধরেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে তার লেখা কবিতা প্রকাশ হলেও জীবিতাবস্থায় তার কোন বই প্রকাশ হয়নি। অবশ্য ১৯৪৪ সালে ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পীসঙ্ঘের পক্ষে তার সম্পাদনায় ‘আকাল’ নামের একটি সংকলন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। ওইবছরই তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। কমিউনিস্ট পাটির সদস্যপদ পাওয়ার পর সুকান্ত ভট্টাচার্য পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতার (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র অবস্থান করে নেন। কবির অকাল মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ছাড়পত্র (১৯৪৭)। পাঠকদের মাঝে এ গ্রন্থের কবিতাগুলো তোলপাড় তৈরি করলে পরে একে একে প্রকাশিত হয় তার বেশ কয়েকটি গ্রন্থ। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি। পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তাঁর রচনাবলি প্রকাশিত হয়।

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্র-নজরুল পরবর্তী পর্যায়ে সুকান্তের আবির্ভাব স্মরণীয়। সুকান্তের কবিতায় বিষয় ও বক্তব্যের বহুমাত্রিকতা একটি নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। সুকান্ত ভট্টাচার্য বুর্জোয়া রাজনীতির প্রভাব বলয় ভেঙ্গে নতুন সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে নিবেদিত থেকে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন, সমাজচেতনা ও মূল্যবোধের জাগরণে নিবেদিত থেকেছেন।

স্বল্প আয়ুর এই কবি পৃথিবীতে চলমান ঘটনা আর রাজনীতিতে সচেতন ছিলেন। কাব্যচর্চার সময় তাঁর খুব দীর্ঘ না থাকলেও তাঁর কবিতা পাঠকের কাছে আগ্রহ সঞ্চার করেছে। বলা যেতে পারে সুকান্ত একটি আধুনিক কাব্যভাষার সৃষ্টি করেছেন। এখানেই অন্য কবিদের থেকে তার স্বতন্ত্রতা। তিনি গণমানুষের মুক্তির প্রেরণা সৃষ্টিতে মগ্ন ছিলেন। তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠ বাঙ্গালী পাঠককে আকৃষ্ট করে রেখেছে সেই কারণেই। যেহেতু একজন প্রগতিশীল কবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে বিচ্যুত নন। সেহেতু চলমান ঘটনাপ্রবাহ ও ভবিষ্যৎকে তিনি প্রত্যক্ষ করেন সচেতনভাবে। খুব কাছে থেকে দেখা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা সুকান্তের কবিচিত্তকে আলোড়িত করে। দেশেদেশে বিক্ষোভ, নিরন্ন মানুষের হাহাকার ও প্রতিবাদ কবিতায় তুলে ধরে সুকান্ত নতুন ধারার কবিতা রচনা করেন। 

সুকান্তের সাহিত্য-সাধনার মূল ক্ষেত্র ছিল কবিতা। সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম, যন্ত্রণা ও বিক্ষোভ তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু। তাঁর রচনাকর্মে গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাণীসহ শোষণহীন এক নতুন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়েছে। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার বৈপ্লবিক ভাবধারাটি যাঁদের সৃষ্টিশীল রচনায় সমৃদ্ধ হয়েছে, সুকান্ত তাঁদের অন্যতম। তাঁর কবিতার ছন্দ, ভাষা, রচনাশৈলী এত স্বচ্ছন্দ, বলিষ্ঠ ও নিখুঁত যে, তাঁর বয়সের বিবেচনায় এমন রচনা বিস্ময়কর ও অসাধারণ বলে মনে হয়। পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৯৪৭ সালের ১৩ মে ২১ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগেই কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

সুকান্ত ছিলেন গণমানুষের কবি। তাই জীবদ্দশায় সরকারী রোষানলে তার মূল্যয়ন হয়নি। তবে অকাল মৃত্যুর পর তার লেখা অপ্রকাশিত কবিতা একে একে গ্রন্থকারে প্রকাশিত হলে পাঠক ও বোদ্ধারা। 

অসময়ে চলে যাওয়া এই কবির বাংলাসাহিত্যকে দেওয়ার ছিল আরো অনেক কিছু। 
তবে মৃত্যুতে মলিন হয়নি সুকান্তের কবিতা, মানুষের হৃদয়ে তার অবস্থান এখনো সজীব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪