বাঘ মানেই অন্য রকম কিছু। কেউ বাঘের নাম শুনে ভয় পান, আবার কেউবা বাঘের নামে সাহসিকতা দেখান। কথায় কথায় শাবাশ বাঘের বাচ্চা বলেও মানুষ বাহবা দিয়ে থাকে। বাঘ নামটিই যেন এক ধরনের গল্পগাথা। আর এ জন্য গল্পে বা চিড়িয়াখানায় যেখানেই হোক না কেন, বাঘ দৃষ্টি কাড়বেই। বাস্তবে বাঘ বলতে অনেকেরই চেনাজানা ডোরাকাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে। তবে হঠাৎ চোখের সামনে সাদা বাঘের দেখা মিললে চোখ আটকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। ঠিক এমনই একটি সাদা বাঘ দর্শনার্থীদের কৌতূহল হয়ে দেখা দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। আগ্রহের কারণ, এই বাঘটি ভিন্ন রঙের ও দুষ্টু প্রকৃতির। তার গর্জন সারাক্ষণই মাতিয়ে রাখে কোর সাফারি পার্কের বাঘ-বেষ্টনী।
রাজধানীঘেঁষা এশিয়ার বৃহত্তম গাজীপুুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ১০টি। এর মধ্যে ৬টি নারী ও ৪টি পুরুষ প্রজাতির। এদের মধ্যেই একটি সাদা নারী বাঘ রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা এক নারী বাঘ ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট জন্ম দেয় এই সাদা বাঘিনীর। বর্তমানে এই বাঘিনীর বয়স দুই বছরের কিছু বেশি। এদিকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দেশের প্রথম সাদা পুরুষ বাঘের জন্ম হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই। সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, দেশের এ দুই প্রান্ত মিলিয়ে রয়েছে এক জোড়া সাদা বাঘ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক সারোয়ার হোসেন খান বলেন, সাদা এই বাঘটি স্বজাতীয় গোত্রের অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে কিছুটা দুষ্টু ও চঞ্চল প্রকৃতির। করোনাকালে তার আচরণ কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। ১ নভেম্বর থেকে পার্কটি খুলে দেওয়ায় দর্শনার্থীর আনাগোনা বেড়ে যায়। এতে সাদা বাঘটির আচরণে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। হঠাৎ দর্শনার্থীদের আগমনে সে প্রতিনিয়ত হুঙ্কার ছুড়ে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করছে। তার আচরণ এমন যে, বনের রাজা সিংহও যেন তার কাছে নস্যি।
তিনি বলেন, ‘সে অন্যান্য বাঘের সঙ্গে তেমন ঝগড়া-বিবাদ করে না। তার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় থাকে গরুর গোশত। প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী এই বাঘটি গর্ভধারণের উপযোগী হয়ে উঠছে। দেশীয় পরিবেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই বাঘটি গর্ভধারণ করবে বলে আমরা আশা করছি।’ দীর্ঘদিন বাঘ নিয়ে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান।
তিনি আরো বলেন, জিনগত কারণে সাদা বাঘের জন্ম হয়। তবে সুন্দরবনে এখনো পর্যন্ত এমন সাদা বাঘের দেখা মেলেনি। দেশে জন্ম নেওয়া এখন পর্যন্ত সাদা বাঘ এ দুটোই। তবে সাদা বাঘ দেখতে খুব সুুন্দর। দেশের দুটি স্থানে থাকা পুরুষ বাঘ ও নারী বাঘকে একসঙ্গে রাখলে দর্শনার্থীরা আরও বেশি বিনোদন পাবেন। প্রজননে দেশে সাদা বাঘের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, সাফারি পার্কে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করেই সাদা বাঘ খোঁজেন। তাদের অন্যতম আকর্ষণই থাকে সাদা এই বাঘ। বিশেষ করে শিশুদের আগ্রহ বেশি সাদা বাঘ ঘিরে।