পাবনা সদর গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন পাবনার সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহান শিক্ষাগুরু মনোয়ার হোসেন জাহেদী। রেখে গেলেন তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ গৌরবময় আলোকিত জীবনকাল। অসংখ্য শিয্যদের শিখিয়ে গেলেন মানুষ হওয়ার মহান মন্ত্র।
পৃথিবীকে তিনি শুধু দিতেই এসেছিলেন।
১৯৪৮ সালের ২৩ শে জুন পাবনার সুজানগরে যমুনা গর্ভে বিলীন হওয়া ছায়া সুনিবিড় গাজারিয়া গ্রামে বাবা আব্দুর সাত্তার ও মা রহিমা খাতুনের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন পাবনার কৃতি সন্তান মনোয়ার হোসেন জাহেদী।
বাবার চাকুরীর সুবাধে স্কুল জীবন কাটান বগুড়া, রংপুরে। উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন রংপুর কার মাইকেল কলেজ,পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। অধ্যাপনা শুরু করেন বগুড়া তালোড়া কলেজ ও পাবনা শহীদ সরকারি বুলবুল কলজে।
সে বছর পি এস সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে দেশে প্রথম স্থান অধিকার করে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে দীর্ঘ দিন বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন তিনি।
পাবনার এই শিক্ষাগুরু, ছিলেন পাবনা সকল মানুষের শ্রদ্ধেয়, আলোকিত অমূল রত্ন। যিনি অনেকগুলা গ্রন্থের লেখক, গবেষক,সুমধুর সুবক্তা ছিলেন।
ক্লাসরুম থেকে শুরু করে হাজার মানুষের সমাবেশে হট্টগোল চেচামেচির মাঝে স্যার যখন কথা বলতে শুরু করতেন তখন থেমে যেতো সব কোলাহল। সবাই চুপ হয়ে যেতো। মন দিয়ে শুনতো স্যারের কথা। এ যেনো এক যাদুকরী বক্তা এসেছে মানুষের অন্তর ছুয়ে দিতে।
বরেণ্য এই আলোকিত মানুষটি শুধু বহু ছাত্রের শিক্ষক ছিলেন না, তিনি ছিলেন বহু শিক্ষকেরও শিক্ষক।
তিনি জীবনভর সাহিত্য নিয়ে কাজ করেছে, সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করেছেন,বিভিন্ন গবেষণা করেছেন এবং লিখেছেন মানুষের জন্য । তিনি ভেবেছেন মানুষের উন্নয়ন,তিনি ভেবেছেন এই নগরীর উন্নয়ন, তুলে ধরেছেন সমৃদ্ধ অনেক অজানা ইতিহাস। তিনি আলোকিত করতে এসেছিলেন এবং আলোকিত করেই গেলেন।
স্যার, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকে খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাবনা অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রায় দুই যুগ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পাবনা সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ সর্বজন শ্রদ্ধেয় মনোয়ার হোসেন জাহেদী পাবনার আপামর মানুষের কাছে ছিলেন শিক্ষাগুরু।আলোকিত এই মানুষের চলে যাওয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। শোক জানিয়েছেন পাবনার বিশিষ্ট বেক্তিবর্গরা।
স্যার দায়িত্ব পালন করেছেন পাবনা শিল্পকলা একাডেমির সম্পাদক হিসেবেও। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো নাম অনন্ত ঘুমের দেশে, শতাব্দীর ছায়াপথে এডওয়ার্ড কলেজ, শতাব্দীর বিদ্যাপীঠ রাধানগর মজুমদার একাডেমী, বাংলা ছন্দের পাঠশালা, রবীন্দ্রনাথ কবিতায় ফুল, মাকে মনে পড়ে, স্বর্গের দুয়ারে যাত্রা এবং পাবনার কৃতীজনের কথা।
এছাড়া পাবনা জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে “স্মৃতির জনপদ পাবনা” নামে একটি গবেষণাভিত্তিক বই লেখার জন্য স্যার সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে কাজ করে আসছিলেন। ৬০০ পৃষ্ঠার এই বইয়ের নাম” স্মৃতির জনপদ পাবনা”র কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে ছিলো।
একমাত্র কন্যা কাশপিয়া তাবাসসুম জাহেদী অন্তরা এবং স্ত্রী নাজনীন জামান জাহেদীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ভক্ত রেখে গেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ আসর পাবনা চাপা বিবি জামে মসজিদে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়ে পাবনা সদর গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়ে গেলেন পাবনা সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই শিক্ষাগুরু। স্যার চলেই গেলেন তাঁর প্রকাশিত লেখা অন্যতম গ্রন্থ অনন্ত ঘুমের দেশে।