সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠার প্রস্তুতি আজ হারিয়ে গেছে। ক্লাস-পরীক্ষার জন্য নেই কোন প্রস্তুতি। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাস মহামারীতে বাদ পড়েনি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিমধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের করোনা পজেটিভ খবর পাওয়া গেছে। ১৭মার্চ ২০২০ তারিখ (মঙ্গলবার) গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় সিদ্ধান্ত অনুসারে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সর্তকতা হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সকল বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়। দীর্ঘ ছুটি শেষে আগামী ৮ জুন সীমিত পরিসরে অফিস খুলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এই দীর্ঘ ছুটিতে কেমন কাটছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দিন গুলো ! এবারের ছুটিটা অন্যরকম এবং খুব দীর্ঘসময় ধরে চলমান। করোনার ভাইরাসের জন্য কোনো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়া হয়ে উঠে নি , বাসায়ই থাকতে হচ্ছে। ছুটির শুরুটা কাজে লাগিয়েছিলাম খুব ভালো ভাবেই। আমার স্কুল ‘রুপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়’ শিক্ষার্থী পরিবার এর ব্যানারে (কভিট-১৯) এর সচেতনামূলক কাজকর্ম লিফলেট বিতরণ, বিভিন্ন জায়গায় পানির ড্রাম স্থাপন এবং অসচ্ছল পরিবারের মধ্যে ত্রান বিতরন কার্যক্রমে সময় দিয়েছি ।
পরিবারের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করেছি। মাঝেমধ্যে ইউটিউব দেখে পাওয়ার পয়েন্টের কিছু কাজ শেখার চেষ্টা করেছি। ছোট-ছোট কাজে নিজেকে যুক্ত রেখেছি যাতে বাসায় থেকে বিরক্ত না হই। বিভিন্ন টিভি সিরিজ ও মুভি দেখে অবসর সময় কাটিয়েছি। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি আমরা এই মহামারী কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবো ইনশাআল্লাহ। যখন ভার্সিটি বন্ধের নোটিশ পেলাম তখন পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি এতটা ভয়াবহ অবস্থা হবে।
প্রথমে ভেবেছিলাম সময়টা ক্লাস-পরীক্ষা ছাড়া ভালোই কাটবে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ক্যাম্পাসে প্রথম দিনগুলো খুব ভালো ছিল। নতুন ক্লাস, নতুন স্যার, নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ সবকিছুতেই মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে আবার বাসায় ফিরে পরিবারের সাথে থাকতে পেরে ভালোও লাগছে, আবার সেই নতুন পরিবেশে ফিরে যেতেও ইচ্ছা করছে।
প্রিয় লেখকের কিছু বই পড়েই বন্ধের সময়টা কাটছে এখন। আশা করি খুব দ্রুত সবকিছু আগের মত ঠিক-ঠাক হয়ে যাবে। সবকিছু ফিরে পাবে প্রাণচাঞ্চল্য। এটাই এখন একমাত্র চাওয়া। ছুটির শুরুটা মোটামুটি ভালই লেগেছিল, অনেক দিন পর নিজের বাড়িতে এসেছি ।তার উপর বই-পত্র ছাড়া ছুটি তো অারো মজার। একাডেমিক ক্লাস-পরীক্ষা না থাকায় এই লম্বা ছুটিতে উপন্যাস ও গল্পের বই পড়া হয়েছে
বাড়ির কাজে মা কে সাহায্য করছি, নতুন নতুন রান্না শিখছি, ছোট ভাইয়ের পড়ালেখা দেখিয়ে দিয়েছি। সময় কাটানোর জন্য টিভি দেখেছি । যদিও এখন বন্ধুদের সাথে অাড্ডা দেয়া হয়না, তবে মেসেঞ্জারে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দেখা না হলেও ভিডিও কলে সবার সাথে কথা হচ্ছে । পরিবারের সবার সাথে সময় দিতে পারছি।
করোনার এই পরিস্থিতির জন্য প্রতিদিন মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যু হচ্ছে, এসব চিন্তা করে নিজের জীবনের স্থায়িত্ব নিয়েও বার-বার প্রশ্নের মুখো-মুখি হচ্ছি। মনে হচ্ছে মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখছি,সব সময় আতঙ্কে থাকি । মনের মধ্যে অাগের চেয়ে বেশি অাল্লাহ্ ভয় কাজ করছে। সব মিলিয়ে এই লম্বা ছুটি অালহামদুলিল্লাহ্ ভালো কাটছে। এখন সুস্থ পৃথিবীতে ফিরে আসা একমাত্র চাওয়া।