নিজস্ব প্রতিবেদক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য অনিরাপদভাবে ফাঁস হয়ে প্রতারকদের হাতে পৌঁছানোর আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা চরম উদ্বেগে রয়েছেন। মেধাবৃত্তির প্রলোভন দেখিয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত গোপন তথ্য সংগ্রহ করে অর্থ আত্মসাৎ করছে। ইতোমধ্যে একাধিক শিক্ষার্থী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতারকরা ফোনে পরিচয় যাচাইয়ের সময় শিক্ষার্থীদের পুরো নাম, বিভাগ, বর্ষ, এমনকি পিতা-মাতার নাম এবং এইচএসসির বৃত্তির ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য পর্যন্ত জানত। ফলে তারা সহজেই প্রতারণার ফাঁদে পড়েন।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আয়ুব আলী বলেন, ‘এক চক্র ফোন করে আমার পরিচয় যাচাই করে জানায়, আমি একটি ‘মেধা স্কলারশিপ’ পেয়েছি। এরপর তারা আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর চায়, আমি সরল বিশ্বাসে দিয়ে দিই। পরে দেখি, অ্যাকাউন্টে থাকা ৬ হাজার টাকা গায়েব।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজুল হাকিম আকাশ জানান, ‘তারা জানায়, ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আমার স্কলারশিপ অনুমোদিত হয়েছে। আমি সন্দেহ করে কোনো তথ্য দিইনি। পরে ফেসবুকে দেখি, অন্য একজন শিক্ষার্থী ৪ হাজার টাকা খুইয়েছে একই পদ্ধতিতে।’
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাহিল বলেন, ‘প্রতারক নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলে পরিচয় দেয়। দুইবার ওটিপি ও ব্যাংক তথ্য চায়। প্রশ্ন হলো—সে এতসব তথ্য জানলো কীভাবে?’
ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সামি উদ্দিন সাজিদ বলেন, ‘ওই ব্যক্তি সালাম দিয়ে আমার ব্যাচ, মা-বাবার নাম, এমনকি আমি কোন ব্যাংক থেকে এইচএসসির বৃত্তি পেয়েছি—সব জানে। আমি যখন কার্ড নম্বর দিতে অস্বীকার করি, তখন সে বলে, তাহলে টাকা আমি নিজের কাছে রেখে দিচ্ছি!’
এসব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা ধারণা করছেন, হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো ডেটাবেস, অনিরাপদ ওয়েবসাইট বা গুগল ফর্ম থেকে তথ্য চুরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখনো কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘আমি বিষয়টি জেনেছি। সমস্যাটির সমাধানের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আপাতত শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ করছি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘ঘটনাগুলো অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কিছু অসাধু চক্র শিক্ষার্থীদের প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমরা খতিয়ে দেখব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে কোনো তথ্য চুরি হয়েছে কি না।’
এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন হয়নি। সচেতন শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে প্রতারণার মাত্রা আরো বাড়তে পারে। তারা অবিলম্বে তথ্য নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন।