1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ০১:৩২ অপরাহ্ন

বন্যপ্রাণী দূর্ঘটনা রুখবে কৃত্তিম সেতু

  • সময় : শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১
  • ২৫৪


জবি প্রতিনিধি :

সড়ক দূর্ঘটনা এবং তড়িতায়িত হওয়া বন্যপ্রাণীদের জন্য প্রধান হুমকিগুলোর মধ্যে একটি। বৈশ্বিক উন্নয়ন যেমন আমাদেরকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে, অন্যদিকে এই উন্নয়ন কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাল হয়ে দাড়িয়েছে আমাদের পরিবেশ এবং প্রতিবেশের জন্য। এই উন্নয়নের পথ ধরে বনের মাঝে তৈরি হচ্ছে মহাসড়ক, নেয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহের তার। যার ফলে রাস্তা পার হয়ে বনের এক দিক অন্য দিকে যাওয়ার সময় সড়ক দূর্ঘটনা এবং তড়িতায়িত হয়ে প্রান যাচ্ছে অসংখ্য বন্যপ্রাণীর। এই একই চিত্র আমাদের দেশেও আমরা দেখতে পাই। অসংখ্য বন্য প্রানির নির্মম মৃত্যু হচ্ছে দেশের বিভিন্ন বনে।
বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আল-রাজী বলেন, আমরা ২০১৫-২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বন্যপ্রাণির সড়ক দূর্ঘটনা এবং তড়িতায়িত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করি। নিজেদের সংগ্রহীত তথ্য, সোস্যাল মিডিয়া, নিউজ ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে আর্ন্তজাতিক জার্নাল জুলজিয়াতে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করি। সেই তথ্যানুসারে,  গত ২০১৫-২০১৭ সালে পর্যন্ত সাতছড়ি বনে বিভিন্ন প্রজাতির ১৪টি এবং লাউয়াছড়াতে ১৩টি বন্যপ্রাণী সড়ক দূর্ঘটনা এবং তড়িতায়িত হয়ে মারা গেছে। এই মৃত্যুর তালিকায় লম্বালেজী হনুমানদের সংখ্যা সব থেকে এগিয়ে। আমাদের ধারণা, এই লম্বালেজ বিশিষ্ট হনুমানগুলো যখন তাদের চলাচলের জন্য বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করে তখন তাদের লেজ দুই তারের মাঝে পড়ে বৈদ্যুতিক সার্কিট পূরন করে। যার ফলে তারা তড়িতাহত হয়ে মারা যায়।
এই সমস্যা কিছুটা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা `Artificial Canopy Bridges For Conservation’ নামক একটি প্রকল্প হাতে নেই। এই প্রকল্প মূল গবেষক মার্জান মারিয়া ২০১৯ সালে এক্সপ্লোরার ক্লাব নামের আমেরিকান একটি সংস্থায় এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করেন এবং কিছু আর্থিক সহযোগিতা পান। এছাড়াও যারা গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজের জন্য `Plumplorise.V’ নামের একটি জার্মানভিত্তিক দাতা সংস্থা ও সহযোগীতা প্রদান করে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল সাতছড়ি বনে রাস্তার পাশের গাছগুলোতে কৃত্তিম সেতু তৈরী করে কৃত্তিম সংযোগ করে দেয়া। যাতে তারা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে। আমরা বন বিভাগের সহায়তায় সবথেকে ঝুকিপূরণ দূর্ঘটনা প্রবণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করি ব্রিজ নির্মানের জন্য। ২০২০ সালের ১লা নভেম্বরে আমাদের ব্রিজগুলো স্থাপনের কাজ শেষ হয় এবং তিন মাস অপেক্ষা করি যাতে বন্যপ্রানীরা ব্রিজটি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়। প্রকল্পটির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবির বিন মুজাফফর এবং অক্সফোর্ড ব্রুক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনা নেকারিস। এই কাজে সহযোগীতা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১৫তম আবর্তের ছাত্র আলী আকবর রাফি।
মার্জান মারিয়া বলেন, আমরা তিনমাসের পরে আমাদের ব্রীজের একপাশে একটি করে ক্যামেরা ট্রাপ স্থাপন করি বন্যপ্রাণীর চলাচল পর্যবেক্ষনের জন্য। ২০২১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী ক্যামেরা ট্রাপ স্থাপন করি এবং দুই সপ্তাহ পর পর ক্যামেরা ট্রাপ থেকে তথ্য সংগ্রহ ও ব্রিজ রক্ষনাবেক্ষন জন্য সাতছড়ি বনে যাই। ইতোমধ্যেই আমরা আমাদের ক্যামেরা ট্রাপে বেশ কিছু বন্যপ্রানির চলাচলের ছবি পেয়েছি। যাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বানর, হনুমান এবং বিভিন্ন ইদুরগোত্রীয় প্রাণী।
আমাদের দেশে এমন আরো কিছু বন আছে যার ভিতর দিয়ে এমন মহাসড়ক এবং বৈদ্যুতিক তার গেছে। এই বনগুলোতেও যদি বনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন জায়গাগুলোতে এমন কৃত্তিম সেতু নির্মান করতে পারা যায় তবে হয়তোবা বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর মিছিল কিছুটা হলেও কমাতে পারা যাবে, সাথে সাথে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র রক্ষাও করতে পারব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪