সাতক্ষীরা প্রতিনিধি-
দেশের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার রমজান নগর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর গনি গাজী (৪২)। পেশায় বনজীবি। তবে সবাই তাকে চেনেন টাইগার গনি নামে। এর পেছনে রয়েছে তার এক অদম্য সাহসীকতার গল্প। জীবিকার তাগীদে সুন্দরবনে যাওয়া জেলে বাওয়ালিদের কেউ বাঘের আক্রমণে আহত বা নিহত হলে তাদের জীবন ঝাঁকি নিয়ে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন গণি। তবে এই কাজের জন্য কোন পারিশ্রমিক নেন না টাইগার গনি সেচ্ছায়শ্রমে কাজ করেন তিনি।
তিনি ২০০৭সালে একটি বেসরকারী সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত ওয়াইল্ডটিমের ফরেস্ট টাইগার রেসপনস টিমে চাকরিতে নিয়োগ
পেয়েছিলেন আব্দুল গনি। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাঘের মুখ থেকে অর্ধশতধিক মানুষকে ফিরিয়ে এনেছেন এই টাইগার গনি।
এই টাইগার গনি নামের বিষয়ে তিনি বলেন ছোট বেলা থেকে বাবার সঙ্গে সুন্দরবনের নদী খালে মাছ ধরতে যেতাম।
স্থানীয় সহযোগি হিসেবে ২০০৭ সালে বন বিভাগকে সহযোগিতা করতে একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে ওয়াইল্ড টিমে আমার কাজ করার সুযোগ হয়। ওই সময় আমার এলাকায় একজন মৌয়াল বাঘের আক্রমণে প্রান হারায়। আমি সেই মরাদেহটি উদ্ধার করতে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের সহযোগিতা করি।
পরবর্তীতে ফরেস্ট টাইগার রেসপনস টিমের টিম লিডার দায়িত্ব পাই এরপর টানা ১২বছর ওয়াইল্ড টিমের সঙ্গে থেকে সুন্দরবনের কেউ বাঘের আক্রমনের শিকার হলে আমি তাদের উদ্ধার করে আনি। এই দীর্ঘ সময়ে আমি ৭০টির বেশী মৃত্যু দেহ বাঘের কাছ থেকে উদ্ধার করে এনেছি। এছাড়া কয়েক জন আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে চিকিৎসাকের
কাছে পৌঁছায়ে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
বেসরকারি সংস্থার প্রকল্প শেষ হলেও থেমে নেই টাইগার গণি। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ওয়াইল্ড টিমের ফরেস্ট রেসপনস টিমের প্রোজেক্টের মেয়াদ শেষ হলেও আমার কাজ অব্যাহত রয়েছে। যখনই খবর পাই কোনো মানুষ কে বাঘে ধরেছে আমি সঙ্গে সঙ্গে বনে ছুটে যাই।সর্বশেষ ২০২১ সালের ২১শে ডিসেম্বর বাঘের আক্রমনে নিহত হন বনজীবি মুজিবুর রহমান তার মরাদেহ আমি উদ্ধার করে এনেছি। নিহত মুজিবরের পরিবারের বরাত দিয়ে গণি বলেন, ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর সোমবার বিকেলে মুজিবুর
রহমানকে সুন্দরবনের পায়রা টুনির খাল থেকে বাঘে ধরে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রেস্কিউ টিমের সঙ্গে আমিও সুন্দরবনের যাই। ঘটনা স্থলে পৌঁছনোর পর বাঘের পায়ের চিহ্ন ও রক্তের দাগ দেখে বনের গভীর থেকে মুজিবুর রহমানের মরাদেহটি উদ্ধার করি। এই অল্প সময়ে বাঘটি মৃতদেহটির একটি পা পুরোটাই খেয়ে ফেলে, মৃতদেহটি উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পৌঁছায়ে দিতে পেরেছি এইটুকু আমার তৃপ্তি।
আব্দুল গনি গাজী বলেন আমার মা বাবা মারা গিয়েছেন পরিবারে আমিসহ স্ত্রী এক ছেলেও মানসিক ভারসাম্যহীন এক বোন রয়েছেন। এক মেয়ে তাকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে গত বছর এইচ সি পাশ করেছে চাকরি করছে। সুন্দরবনে মাঝে মাঝে মাছ
ধরতে যেতাম ছোট একটা ব্যবসা শুরু করছিলাম তবে লোকশানে পড়ে বর্তমানে এখন বেকার রয়েছি। যদি কোন সংস্থায় কাজের কোন সুযোগ পাই সেই অপেক্ষায় আছি।
বাঘ নিয়ে সুন্দরবনে কোন প্রজেক্ট চলছে না এই বিষয়ে সুন্দরবন সুরক্ষা কমিটি সাতক্ষীরার আহবাহক গাজী সালাউদ্দিন বাপ্পি বলেন, গনি খুব ভালো
মানুষ সুন্দরবনে কাউকে বাঘে ধরেছে শুনলেই সেচ্ছায় উদ্ধার কাজে অংশ নেন তিনি। স্থানীয়রা তাকে এই সাহসী কাজের জন্য শ্রদ্ধা করে। চাকরী না থাকায় বর্তমানে অর্থকষ্টে দিন যাপন করছে সে। এরপর মানুষের বিপদে এগিয়ে আসেন গণি।
সরকারী ভাবে এই সাহসী মানুষটিকে সন্মানিত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান তিনি।
কথা হয় পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষণ (এসিএফ) কর্মকতা ইকবাল হাসান বলেন,টাইগার গনি এক সময় একটি বেসরকারী সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত ওয়াইল্ড টিমের
সঙ্গে কাজ করতেন তখন থেকে কেউ বাঘের আক্রমণের শিকার হলে তাকে উদ্ধার করতেন গনি। সে সময় ওয়াইল্ড টিম ও বন বিভাগ তাকে বিভিন্ন প্রশিক্ষক দেওয়া হয়েছিলো। বর্তমানে আমাদের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই তবে কয়েক দিন আগে বাঘের আক্রমণে নিহত মুজিবুর কে উদ্ধার অভিযানে রেসকিউটিমের সঙ্গে আব্দুল গনি সেচ্ছায় এগিয়ে এসেছিলেন, সুন্দরবনে বর্তমানে ওয়াইল্ড টিমের কোন কার্যক্রম নেই। তবে ভবিষ্যতে কোন সুযোগ হলে টাইগার গনির জন্য কাজের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।