গৌরব, ঐতিহ্য ও সাফল্যের সাথে আজ ১৬ তম বর্ষে পদার্পণ করলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে উদ্বোধন করা হলো ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ নামে ১৬ তলাবিশিষ্ট ১ হাজার আসনের একমাত্র ছাত্রী হল। এর মাধ্যমে অনাবাসিক তকমা ঘুচলো জবির।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ঢাকায় পূর্ববঙ্গ ব্রাহ্ম সমাজের শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্ম স্কুল। সেই ব্রাহ্ম স্কুল থেকে দেড় শতকের রূপান্তরের ইতিহাস পেরিয়ে ২০০৫ সালে এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
একটি পাঠশালা হিসেবে যাত্রা শুরু করে দেড় শতকের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর অগ্রযাত্রার ইতিহাস বড়ই রোমাঞ্চকর।
প্রথম দিকের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে শুরু হয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ কলেজ এই নামেই বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ সময় জুড়ে পরিচিত ছিল।
১৮৭২ সালে বালিয়াটির জমিদার কিশোরী লাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। ১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজে পরিণত হয়। এ সময় এটিই ছিল ঢাকার উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা শুরু হলে জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গ্রন্থাগারের বই-পুস্তক, জার্নাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সাজাতে জগন্নাথ কলেজ গ্রন্থাগারের ৫০ ভাগ বই দান করা হয়। জগন্নাথ কলেজে আইএ আইএসসিবিএ (পাস) শ্রেণি ছাড়াও ইংরেজি, দর্শন ও সংস্কৃতি অনার্স এবং ইংরেজিতে মাস্টার্স চালু করা হলেও ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অবনমিত করা হয় জগন্নাথকে। পুরান ঢাকার নারী শিক্ষায় বাধা দূর করতে ১৯৪২ সালে সহশিক্ষা চালু করা হয়।
১৯৪৮ সালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ১৯৪৯ সালে আবার এ কলেজে স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরু হয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ রফিক উদ্দিন (ভাষা শহীদ রফিক) আত্মত্যাগ করেন । ১৯৬৩ সালে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান পুনরায় কো-এডুকেশন চালু করেন। ১৯৬৮ সালে এটিকে সরকারিকরণ করা হয়, কিন্তু পরের বছরেই আবার এটি বেসরকারি মর্যাদা লাভ করে। ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এ কলেজের প্রশংসনীয় অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে কলেজে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। স্বাধীনতার পর ক্যাম্পাস থেকে একাধিক গণকবর আবিষ্কৃত হয়। বিশ^বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’। ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ (২৮নং আইন) বলে কলেজটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। পূর্বতন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে গণ্য হয়। তাদের নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সনদ লাভ করে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ১১ দশমিক ১১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ এবং ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমিতে সুবিশাল ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে।