সোহেল রানা, ঢাকা :
আসন্ন আশুলিয়া প্রেসক্লাবের ৩রা জুন অষ্টম দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন স্থগিত করেছেন আদালত।বুধবার (৩১ মে) দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে সিনিয়র সহকারী জজ জাকির হোসেন এ রায় দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী মাজহারুল ইসলাম টিটু বলেন, আদালতের এ নির্দেশের ফলে প্রেস ক্লাবের নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থায় থাকবে।
এ জন্য উভয়পক্ষকে আদালত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩ রা জুন অগঠনতান্ত্রিকভাবে আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত ছিল।
প্রকৃত বৈধ ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে অগঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অষ্টম দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করলে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও এশিয়ান টেলিভিশনের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার শাহ আলম (সদস্য নং-১৪) এবং দৈনিক এশিয়া বাণী পত্রিকার সাংবাদিক ও আশুলিয়া প্রেসক্লাবের (সদস্য নং-৪২) ওবায়দুর রহমান কালাম যৌথভাবে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাংবাদিকতা করছেন তারা। প্রতিষ্ঠা কালীন সদস্য ও পেশাদার সাংবাদিক হয়েও একটি চক্রের কারণে বার বার আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সদস্য পদ থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আসছেন। ক্লাবের স্বার্থ রক্ষায় অবৈধ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় অবৈধ ও বেআইনিভাবে তৎকালীন সভাপতি মোজাফফর হোসেন জয় ও সাধারণ সম্পাদক ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি শাহ আলম ও ওবায়দুর রহমান কালামকে বহিষ্কারের নোটিশ দেয়। পরে বহিষ্কারের নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এই দুই সাংবাদিক তাদের সদস্য পদ ফিরে পেতে আদালতে মামলা দায়ের করলে (মামলা নং – ৩৬/১৯) দীর্ঘদিন শুনানির পর ২০২২ সালের ২০ জুলাই শাহ আলম ও কালামের সদস্য পদ বৈধ ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ অবৈধ বলে রায় দেন আদালত।
এরপর থেকে নির্বাচনী ভোটার তালিকায় সদস্যপদ অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা চালিয়ে আসেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু ওই চক্রটি নানা ষড়যন্ত্র ও বিরোধিতা করে আদালতের রায় উপেক্ষা করে নিজের মতো মনগড়া ভাবে চলতি বছরের ১৯ মে ৪৬ সদস্যের নাম উল্লেখ করে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। একই তারিখে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের ২০২৩-২০২৪ সালের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ৩ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
মামলার বিবাদীরা হলেন, আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মোজাফফর হোসেন জয়, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, আশুলিয়া প্রেসক্লাবের অষ্টম দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্কুল শিক্ষক ফারুক আহমেদ, সহকারী নির্বাচন কমিশনার এবং ঢাকা জেলা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ এনামুল হক মুন্সী ও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
এদিকে আদালত সূত্রে জানা গেছে, এই মামলা ছাড়াও একই অভিযোগ ও নির্বাচন স্থগিত চেয়ে দৈনিক আলোকিত কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং আশুলিয়া প্রেসক্লাবের বর্তমান কমিটিসহ তিনবারের নির্বাচিত সহ-সভাপতি মো. ওমর ফারুক (সদস্য নং ১৭) সহ তার সমর্থিত ৫ জন ভুক্তভোগী সাংবাদিক বাদী হয়ে আরও একটি মামলা (নং-৪৫২/২৩) দায়ের করেছেন। মামলাটি আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সভাপতি সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে বৃহস্পতিবার (১ জুন) শুনানির দিন নির্ধারণ করেন আদালত। তবে সেই মামলায় বিবাদীপক্ষ এক দরখাস্ত দ্বারা সময়ের প্রার্থনা করলেও আজ বুধবার দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাহ আলমের আরেক মামলায় আগামী ৩ রা জুন নির্বাচনী কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত।
মামলার বাদী ওমর ফারুক বলেন, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের একমাত্র প্রিয় সংগঠন আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট করে মনগড়া নিয়মে চলতে পারে না। আমরা সঠিক নিয়মে থাকা সত্ত্বেও আমাদের বাদ দিয়ে একটি পাঁতানো নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। এ নিয়ে বারবার কথা বলেও কোন কাজ হয়নি। তাই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩ রা জুন আশুলিয়া প্রেসক্লাবের অষ্টম দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে ২০ মে হতে ২২ মে বর্তমান কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আপাতত আদালতের এই স্থগিতাদেশ থাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হচ্ছে না।
বা বু ম/ অভিজিৎ