উৎফল বড়ুয়া, সিলেট:
সিলেট বৌদ্ধ বিহারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে “শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা” উদযাপনের মধ্যদিয়ে বৌদ্ধদের ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত শুরু। থেরবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু-সংঘদের ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস বিনয়ের একটি অংশ।সাংঘিক জীবনের সাথে বর্ষাবাস অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। প্রতিবছর শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা হতে আশ্বিনী পূর্ণিমা এই তিনমাস ভিক্ষু-সংঘরা বিহারে বর্ষাবাস অধিষ্ঠান করেন।আজ হতে আড়াই হাজার বছর পূর্বে মহাকারুনিক বুদ্ধ ভিক্ষু সংঘদের বর্ষাবাস অধিষ্ঠানের বিনয় প্রজ্ঞাপ্ত করেছিলেন। এই সময় হতে তিনমাস পর্যন্ত বৌদ্ধরা উপোসথ তিথিতে অষ্টাঙ্গপোসথ শীল গ্রহনের মাধ্যমে দান-শীল ভাবনা অনুশীলনে রত হন।
গত ২৩ জুলাই ২০২১ শুক্রবার, ২৫৬৫ বুদ্ধবর্ষ সিলেট বৌদ্ধ বিহারে বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদযাপিত হয়। ত্রৈমাসিক বর্ষাবাসে ভিক্ষু-সংঘরা শীল-সমাধি -প্রজ্ঞা এবং অষ্টাঙ্গপোসথধারী উপাসক-উপাসিকা ও গৃহীরা আজ থেকে তিন মাসের জন্যে দান-শীল-ভাবনা অনুশীলনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধিতার চেষ্টা করবেন। আষাঢ়ী পূর্ণিমার এই শুভ তিথিতেই রাজকুমার সিদ্ধার্থ রানী মহামায়ার গর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহণ, কুমার সিদ্ধার্থের গৃহত্যাগ, বুদ্ধত্ব লাভের পর সারনাথের ঋষিপতন মৃগদাবে পঞ্চবর্গীয় শিষ্যের কাছে প্রথম ধর্মচক্র প্রর্বর্তন সুত্র দেশনার মাধ্যমে সর্বপ্রথম দেবমানবের কল্যাণে সদ্ধর্ম প্রচার শুরু করেন।
ধর্মপ্রচারের মূল বিষয় ছিল- জগৎ দুঃখময়, জীবন অনিত্য, জগতের সব সংস্কার অনিত্য। জন্ম, জরা, ব্যাধি, মৃত্যুই শাশ্বত। এই দুঃখময় সংসার থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় তৃষ্ণাক্ষয়, শীল, সমাধি, প্রজ্ঞার সাধনা এবং আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ তথা আটটি বিশুদ্ধ পথে চলা।
এ শুভ তিথিতেই ভগবান বুদ্ধ শ্রাবস্তীতিতে প্রতিহার্য প্রদর্শন করেন এবং মাতৃদেবীকে দর্শন ও উদ্ধারের জন্য অভিধর্ম ধর্মদেশনার জন্য তাবতিংস স্বর্গে গমন করেন। তথাগতের জীবনে এই পাচঁটি স্মরণীয় গঠনাসমূহ একেক আষাঢ়ী পূর্ণিমায় হয়েছিল বলেই আষাঢ়ী পূণির্মাটি বৌদ্ধদের জন্যে অতীব গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূণ্যময় তিথি।
আজ সারা বাংলাদেশে ক্রান্তিকাল সময়ের মধ্যে বৌদ্ধরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদযাপিত হলো। বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস এখন আর অতংকের নয়। করোনাকে নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ তিন মাসের ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ ত্রৈমাসিক এ বর্ষাবাসের মধ্যে ভিক্ষুসংঘ ও গৃহীসংঘ ধর্ম-বিনয়ের বহুবিধ আচার-আচরণ ও বিধিবদ্ধ নিয়ম-নীতি পালন ও অনুশীলন বাধ্যতামূলক।
আজ এমন এক সময়ে আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদযাপন করা হচ্ছে, যখন সারা পৃথিবীর মানুষ করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আতঙ্কিত। মানবজীবনে ধর্মীয় আচার – অনুষ্ঠান, ব্রত, অধিষ্ঠান সবই মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য। শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা পৃথিবীর মানুষকে করোনাসহ সব ধরনের রোগ-শোক থেকে দূরে রাখুক- এটাই আজ বৌদ্ধদের প্রার্থনা।