মলয় বিকাশ দেবনাথ, সাংবাদিক।।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবব্ধু শেখ মুজিবুর রাহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ আর স্বপ্ন নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে আমরা বাস্তব সোনার বাংলা পেয়েছি। তথ্য প্রযুক্তির এই অসামান্য অগ্রগতির নেপথ্য নায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়। উন্নত দেশের সকল নিত্য নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার আমাদের দেশের প্রযুক্তিবিদরা যেন তাৎক্ষনিক পেয়ে যায় তার জন্য ইন্টারনেটের প্রসার তার আরেক বড় অবদান। আর এসব কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবে রুপ দিয়ে চলেছেন মাননীয় আই সি টি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
এ টু আই, স্টার্ট-আপসহ আরো কিছু উইং এর মাধ্যমে তরুন প্রজন্ম যতটা প্রযুক্তির প্রসার ঘটিয়েছে তা এ সরকারের একটি বড় সাফল্য। তরুন প্রজন্মকে সঠিক পথটি দেখানোই মূল বিষয়।
সময় এখন এগিয়ে যাবার।চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে অবশ্যই নিজেদের প্রতিনিয়ত আপডেট রাখতে হবে।বর্তমানে ব্লক চেইন নিয়ে একটি নিরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। উন্নত দেশের অনেকেই এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদেরকে স্বয়ংক্রিয় করছে। আমাদের উচিৎ কালবিলম্ব না করে প্রাথমিকভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা।
ব্লক চেইন নিয়ে কিছু আলোচনা করা প্রয়োজন।ব্লক চেইন কী বা কিভাবে এটি কাজে আসে। ব্লক চেইন হচ্ছে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত তথ্য সংরক্ষণের একটি নির্ভরযোগ্য উন্মুক্ত পদ্ধতি।এর মাধ্যমে তথ্য বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি চেইন আকারে সংরক্ষণ করা হয়। এটি হ্যাশ ফাংশন দিয়ে কাজ করে। হ্যাশ ফাংশন যেকোনো ছোট বা বড় শব্দ বা বাক্যকে সমান দৈর্ঘ্যের সংকেতে পরিণত করতে পারে। অর্থাৎ আমরা যে পাসওয়ার্ডই ব্যবহার করি না কেন তা একটি সংকেতে পরিনত হবে।ফলে হ্যাকাররা সে সংকেত থেকে কোনোভাবেই পাসওয়ার্ড খুঁজে পাবে না। তার মানে এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ একটি পদ্ধতি। সহজভাবে বলতে গেলে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে যে টাকা চুরি হয়েছে ব্লক চেইন পদ্ধতি থাকলে এটি সম্ভব ছিল না। তথ্য প্রযুক্তিতে নিরাপত্তাই প্রথম অনুষঙ্গ।
ব্লক চেইন মূলত আবিষ্কৃত হয়েছিল বিটকয়েনের লেনদেনের জন্য। ‘সাতোশী নাকামতো’ নামের একজন ব্যক্তি কিংবা এ নামের প্রতিষ্ঠান বা কোনো গ্রুপ এ পদ্ধতির উদ্ভাবক। তবে ‘সাতোশী নাকামতো’ এ নামটিও একটি ছদ্মনাম। ২০০৯ সালে এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পর থেকে আজ যে জায়গায় এসে উপস্থিত হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মতে এটি এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সময়োপযোগী। এর ডাটাবেইস সুশৃঙ্খল ও সর্বজনীন। একে কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হয় না। একই সঙ্গে সর্বজনীন হওয়ায় সহজেই যাচাই করা যায় এবং স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হয়। এ প্রযুক্তিটি এমনভাবে কমান্ড দেয়া যেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতি দশ মিনিট অন্তর প্রত্যেকটি ফাংশন যাচাই করতে থাকে। এই লেনদেন গুলিই এক একটি ব্লক। ফলে এর মধ্যে কোনো কিছু সংযোজন বিয়োজনের সুযোগ নাই। ব্যাংকিং সেক্টরসহ সকল প্রকার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি বিশেষ কার্যকর। তাছাড়া এটি সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত কার্যকরভাবে ডাটা সংরক্ষণের কাজে আসতে পারে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার ইতোমধ্যে প্রতিটি সেক্টরেই ডাটাবেইস তৈরির কাজে হাত দিয়েছে। অনেকগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, অন্যগুলো চলমান। তাই এর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা সময়ের দাবী।যেহেতু ব্লক চেইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাই এর বাস্তবায়ন আবশ্যক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ইবটারনেটের দুনিয়ায় পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইন সার্ভারে প্রবেশ করা যায়। তাই পুরনো প্রযুক্তি দিন দিন হুমকির সন্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা অমূলক নয়।
ব্লক চেইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তারমধ্যে এর প্রারম্ভিক খরচ অন্যতম। এর জন্য উচ্চমানের কম্পিউটার প্রয়োজন যা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবস্থা করা কঠিন। তবে একবার স্থাপন করে ফেলতে পারলে তখন আবার খরচ অনেক কম হয়। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে খরচ কম হবে। সরকার এর যাত্রা শুরু করে আমাদের তরুন প্রজন্মের কাছে এ প্রযুক্তি পরিচিত করাতে পারলেই কিছুদিনের মধ্যে এরা এ প্রযুক্তিতে পারদর্শী হয়ে ওঠবে। তখন দেশের ছেলেমেয়েরাই প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে এর প্রমাণ বাংলার তরুণ প্রজন্ম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বহু তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিযোগিতায় নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। রোবট থেকে শুরু করে স্পেসশীপ পর্যন্ত তৈরি করে দেখিয়েছে এদেশের মেধাবী তরুনেরা। বলা বাহুল্য যে, বৈশ্বিক অতিমারির ফলে মানুষ আরো প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। তাই প্রযুক্তিকে সঙ্গে করেই এগিয়ে যেতে হবে। নতুন নতুন প্রযুক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব আয়ত্তে নিয়ে আসতে হবে। তবেই বাস্তবায়িত হবে টেকসই উন্নয়ন ।
পরিশেষে আবারো বলছি, ব্লক চেইন সারা দুনিয়ায় যে নব দিগন্তের সূচনা করেছে আমাদেরও এই প্রযুক্তির মধ্যে প্রবেশ করতে হবে।