যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনয়নের আব্দুলপুরে উৎপাদিত কপির চারা বিক্রিকরে বহু কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রতিবিঘা জমিতে বীজ বপনকরে কপির চারা উৎপাদন পর্যন্ত খরচ হয় ১ লাখ টাকার সামান্য বেশি। খরচ বাদে আড়াইলাখের বেশি টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। যে কারণে চারা উৎপাদন খরচের চেয়ে লাভ বেশিহওয়ায় নতুন নতুন কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন।
আব্দুলপুর গ্রামের একটি মেঠো পথের চারিপাশে সবুজ রঙয়ের দৃশ্য। যে কোন পথচারীরনজর ছুঁয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। চারা উৎপাদন করে আব্দুলপুর গ্রামের সুনাম দেশেরবিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন কপির চারার গ্রাম হিসেবে পরিচিত আব্দুলপুর।বাণিজ্যিকভাবে কপি চারার আবাদ করছেন কৃষকরা। বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারাউৎপাদন প্রতি মৌসুমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ১ যুগ আগে নিজেদেরপ্রয়োজনে চারা উৎপাদন শুরু করেন এখানকার চাষিরা। এখন প্রায় সাড়ে তিনশ বিঘাজমিতে কপির চারা উৎপাদন করা হয়। এখানকার উৎপাদিত কপির চারা প্রতিদিন দেশেরবিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। চারা উৎপাদনে অনেকই নিজেদের ভাগ্য ঘুরিয়েছেন।অনেক কৃষক হয়েছেন লাখপতি। স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার লম্বা হয়। সমপরিমাণ বালি, মাটি ওজৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয় বীজতলায় চারারোপণের আগে ৭/৮ দিন পূর্বে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পরে চারা ঠিকমত না বাড়লে প্রতিবীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেয়া ভাল। আব্দুলপুর গ্রামেরচাষি আজিজুর রহমান জানান, আষাঢ়ের শুরুতে জমিতে বেড দিয়ে বীজতলা প্রস্তুত করাহয়। তারপর বপন করা হয় বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ। বীজ থেকে চারা গজাতে এক মাসসময় লাগে। এই চারা চাষিদের কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি ৬ বছর ধরে কপির চারাউৎপাদন করছেন। আজিজর রহমান জানান, এবারও তিনি ১২ কাটা জমিতে মোট ৮০ টিতৈরি করে বাঁধা কপির বীজ বপন করে। প্রতি বেডে চারা উৎপাদনে তার খরচ হয়েছেআনুমানিক খরচ ১ হাজার টাকা। কিন্তু বেড প্রতি আড়াই হাজার টাকার বেশি চারা বিক্রিকরেছেন। তিনবার চারা উৎপাদনে লক্ষাধিক টাকা লাভের সম্ভাবনার কথা জানান।বর্তমানে বাজারে ফুলকপির ভালো মানের চারা (সনোবক্স) ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা৬০ পয়সা বিক্রি হচ্ছে। একটু দুর্বল চারা বিক্রি হচ্ছে ১ টাকা পিস। আর বাঁধাকপির প্রতিটিচারা (গ্রিন–৬০) ৫০ পয়সা থেকে ৬৫ পয়সা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান চাষি আজিজুররহমান। আরেক চাষি ওসমান গনি জানান, তিনি এক জমিতে চারা উৎপাদন করছেন।এখানকার কপির চারার মান ভালো হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুনাম রয়েছে। ফলেচারা বেশি দামেও বিকিৎ করতে পারেন তারা। তিনি আরো জানান, যশোর ছাড়াও খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গার জেলার বিভিন্নউপজেলা থেকে চাষিরা এসে কপির চারা কিনে নিয়ে যান। কপির চারা উৎপাদন করে তিনিলাখ লাখ টাকা লাভবান হয়েছেন। আইয়ুব আলী জানান, গতবারের মতো এবারো ১ বিঘাজমিতে বীজ বোপনের পর চারা উৎপাদন করেছেন। এখানো তার চারা বিক্রি চলছে।ইতিমধ্যে তিনি দুই লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। আরো দেড় লাখ টাকার চারা বিক্রিকরতে পারবেন। সব মিলিয়ে তিনি মোটা অংকের টাকা লাভ করতে পারবেন বলেআশাবাদী। এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, এক বিঘা জমিতে বীজ রোপন করে চারা উৎপাদনকরতে ১ লাখ টাকার সামান্য বেশি টাকা খরচ হয়।
চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, আষাঢ় মাসথেকে পুরো কার্তিক মাস অবধি বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা উৎপাদন চলে। এরই মধ্যেইচারা বিক্রি করা হয়। অগ্রায়নের মাঝামাঝি সব চারা বিক্রি শেষ হয়। একই পলিথিনেমোড়ানো বেড তৈরি করে জমিতে তিন বার চারা উৎপাদন করতে পারে কৃষকরা। তিনিআরো জানান, কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করে চারার গুণগত মান বজায় রাখতে পরামর্শদিয়ে থাকি। বীজ থেকে কপির চারা উৎপাদন অন্য এলাকার কৃষকদের জন্য দৃষ্টান্ত হতেপারে। এখানকার চারার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।