1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষেই দ্রুত সম্ভব নির্বাচন সংঘটিত হবে-আইন উপদেষ্টা টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৪ আজও তিতুমীর কলেজে শিক্ষার্থীদের  সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণা সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুলের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর রাজধানির সড়কে মাওলানা সাদ পন্থীদের অবস্থান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচিত নয়,তাদের ম্যান্ডেট নেই-বিএনপি মহাসচিব নিজেকে বদলানোর কোনো ইচ্ছে নেই-প্রধান উপদেষ্টা ভারতীয় চ্যানেল ‘রিপাবলিক বাংলা’র বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৩তম ব্যাচের ওরিয়েন্টশন অনুষ্ঠিত

সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি যখন কোভিড ১৯ সুস্থতার পথে অন্তরায়

  • সময় : শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০
  • ৯৫৩

ফারহানা জামান,পিএইচ ডি,সহযোগী অধ্যাপক,সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

কারোরই আর অজানা নয় যে,যেকোনো দুর্যোগকে প্রাথমিক ভাবে প্রাকৃতিক বলে ধরে নেয়া হলেও এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিকদিক রয়েছে।এই সামাজিক মাত্রা একই সাথে দুর্যোগ মোকাবিলায় যেমন কার্যকর ঠিক তেমনিভাবে দুর্যোগ কে বহুমাত্রায় বাড়িয়ে তুলতেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রাখে।প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়,বন্যা বা খরা মোকাবিলায় সামাজিক বন্ধনের একটি ব্যাপক ভুমিকা বিভিন্ন গবেষণায় ফুটে উঠেছে।কিন্তু দুর্যোগ টি যখন কোভিড ১৯ এর মত সংক্রামক কোন ব্যাধি তখন সামাজিক বন্ধনের পরিবর্তে এই বন্ধনের শিথিলতাকেই বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বন্ধনের এই শিথিলতাকে ঘিরেই যখন সমাজে ‘সোশ্যাল স্টিগ্মা’ বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম নেয় তখন তা দুর্যোগের মাত্রা কে বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ।

সোশ্যাল স্টিগ্মা বা সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি আপেক্ষিক একটি ব্যাপার।যুগ যুগ ধরেই এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠী কে নানা উপায়ে হেয় প্রতিপন্ন করার চর্চায় লিপ্ত রয়েছে।পাশ্চাত্য ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় দরিদ্রদের হীন করে দেখার মানসিকতা পরিলক্ষিত হয় এই মর্মে যে,অলসতার কারণে তারা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে অক্ষম। অর্থাৎ কেউ যদি তার দুর্ভাগ্য কে মোকাবিলা করার সঠিক যোগ্যতা না রাখে তাকেই ছোট করে বা হেয় করে দেখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় পাশ্চাত্যে।এমনি ভাবে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুরুষরা নারীদের,শোষণমূলক সমাজব্যবস্থায় ক্ষমতাসীনরা দুর্বলদের, শিক্ষিতরা অশিক্ষিত তথা স্বল্পশিক্ষিতদের, সাদারা কালোদের, সবলরা প্রতিবন্ধীদের নানাভাবে হেয় করে চলেছে প্রতিনিয়ত।এইচ আই ভিতথা এইডস এ আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নতুন কিছু নয় এবং এই দৃষ্টিভঙ্গির রোষানলে পড়েই জীবনের বাকিটা সময় পার করে এক সময় তারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিচ্ছেন।কোভিড ১৯ কে ঘিরে এমনি এক দোষারোপের সংস্কৃতি চালু হতে দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী।একদিকে আমেরিকানরা চাইনিজদের দোষারোপ করছে অন্যদিকে দেশিরা প্রবাসীদের।তবে আমাদের দেশে কভিডকে ঘিরে স্টিগ্মার প্রচলন একটু ভিন্ন এবং অনেকটা অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করীর মত। এর বেশ তীব্র মাত্রা প্রতিফলিত হচ্ছে কভিড ১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে খারাপ আচরণ, ব্যাপক ভীতি এবং ঘৃণার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে। এই দৃষ্টিভঙ্গি আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থতার পথে নানা ভাবে বাধার সৃষ্টি করছেঃ 

১। স্টিগ্মা বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আক্রান্ত ব্যক্তিকে তার সেবা পাবার অধিকার থেকে করছে বঞ্চিত।এমনকি কিছু আক্রান্ত ব্যক্তিদেরহাসপাতালে ভর্তি হবার সুযোগ না পেয়ে হাসপাতালের সামনে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতেও দেখা গেছে।অনেকে আবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েও নিজেদের সেবা নিজেরাই করে চলেছেন। সেবা কর্মীরা নিজেরা আক্রান্ত হবার ভয়ে রোগী থেকে এতটাই দুরত্ব বজায় রাখছেন যে তারা জানালা বা দরজা দিয়ে ওষুধ ছুড়ে ফেলে রেখে চলে যাচ্ছেন। অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি এই বিরূপ আচরণ ব্যক্তির মনের মধ্যে ও নিজ সম্পর্কে হীনমন্যতার উদ্রেগ ঘটায়। অনেকে আবার অন্য কোন রোগের উপসর্গ নিয়ে ও হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসা সেবা থেকে হচ্ছেন বঞ্চিত। 

২। অনেক উপসর্গ সহ ব্যক্তি কোভিড টেস্ট কেই এড়িয়ে চলছেন। তাদের মনে এমন ধারনার জন্ম নিয়েছে যে ফলাফল পজিটিভ আসলেও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কোন লাভ নেই। বাসাতেই যেহেতু বেঁচে থাকার লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে তাই টেস্ট না করেই ঘরে বসে দিন পার করছেন এই সমস্ত আক্রান্ত ব্যক্তিরা। আর যতক্ষণ পর্যন্ত এই ব্যক্তি টেস্ট না করাচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত হয় তিনি নিজেকে কভিড পজিটিভ ভেবে নিজেকে নিজে নানা ভাবে দোষারোপ করে চলছেন অথবা নিজেকে নেগাটিভ ভেবে সংক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছেন। 

৩। এমন অনেক সংবাদ ইতোমধ্যেই প্রচার মাধ্যমগুলোতে দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে যে কভিড পজিটিভ রোগীর বাড়িতে লকডাউন দেয়া সত্ত্বেও এলাকাবাসী কড়া নজরদারীতে রাখছে যাতে করে ওই বাড়ি থেকে কেউ বেরুতে বা ঢুকতে না পারে।এটা জনসচেতনতার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশ করলেও অনেক আক্রান্ত পরিবার এই রোষানল এড়াবার উদ্দ্যেশ্যে ব্যাপারটি সুকৌশলে চেপে যান যা কিনা সংক্রমণের ঝুঁকিকে আর ও বাড়িয়ে তুলতে পারে। 

৪। অনেকেই সামান্য শুকনো কাশিতে ঘাবড়ে গিয়ে টেস্টে চলে যান। ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে সমাজ তার কভিড টেস্টের ফলাফল নেগাটিভ না পজিটিভ তা না জেনেই তাকে পজিটিভ ধরে বসে। ফলে কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত না হয়ে ও ব্যক্তি সমাজের ঘৃণ্য আচরণের স্বীকার হয়ে থাকেন। 

৫। সোশ্যাল স্টিগ্মার এই ব্যপারটি আবার মাঝে মাঝে ধর্মীয় মাত্রা যোগ করে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির পাপের ফল বলে তথাকথিত বক ধার্মিকেরা ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মীয় প্রচারণায় মশগুল থাকেন।এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি দুর্বল চিত্তের হন তবে তিনি নিজেই নিজের পাপ পুণ্যের হিসেব কষতে বসে যান। আর এভাবেই সর্বসাধারণের স্টিগ্মা থেকে ব্যক্তি নিজেই নিজের স্টিগ্মা দ্বারা মানসিকভাবে জর্জরিত হয়ে পড়েন। 

৬। মনে রাখা জরুরি যে সর্বসাধারণের স্টিগ্মা যখন সংক্রমিত হয়ে ব্যক্তির নিজস্ব স্টিগ্মায় রূপ নেয় তখন তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। অর্থাৎ নিজেকে নিজে দোষারোপের বিষয়টি আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হবার পথে প্রধান অন্তরায়।কারণ এটি আক্রান্ত ব্যক্তির মানসিক শক্তিকে প্রবলভাবে আঘাত করে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। আর একথা গবেষণায় প্রমাণিত যে মানসিক স্ট্রেস শরীরের এন্টি বডি তৈরির ক্ষমতাকে অনেকাংশে হ্রাস করে।ফলে ব্যক্তি নিজেই নিজের অসুস্থতার মাত্রা বাড়িয়ে তোলেন বহুগুণে। 

সোশ্যাল স্টিগ্মার চর্চা যদি শুধুমাত্র নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত তবে ও হয়তো দুর্যোগ মোকাবিলা এতটা কঠিন হতো না।কিন্তু চিরাচরিত নিয়মেই এর সাথে যুক্ত থাকে বঞ্চনার গল্প। কভিড ১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাই নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা থেকে। যে জাতিকে সচেতন করে ঘরে বন্দি রাখতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেই একই জাতির সচেতনতার মাত্রা কখন ও কখনো এত অতিরিক্ত হয় যে তা কভিডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবায় হাসপাতাল নির্মাণ এর মত মহৎ উদ্যোগকেও স্তিমিত করে দেয়।আর আক্রান্ত মৃৎ ব্যক্তির সৎকারের জটিলতা নিয়ে কথা বলার অপেক্ষাইরাখেনা।একটা সময় ছিল যখন বাবা মা তাদের অটিস্টিক শিশুকে অন্ধকার ঘরে লুকিয়ে রাখতেন। সময় পাল্টেছে। কালে কালে আমরা বুঝতে শিখেছি অটিস্টিক শিশু বাবা মায়ের কোন পাপের ফসল নয়। আটিস্টিক শিশুদের সীমাবদ্ধতাই তাদের শক্তি এবং এই সীমাবদ্ধতাকেই শক্তিতে রূপান্তরিত করে তাদের সমাজের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হচ্ছে। তাই অসুস্থতাকে দুর্বলতা মনে না করে অসুস্থ ব্যক্তির উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি না করে আমাদের সকলের উচিত তার যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির সুযোগ করে দেয়া।সামাজিক দূরত্ব মানেই মানসিক দূরত্ব নয়।একি ছাদের নিচে বসবাস করে ও যেমন মানুষে মানুষে থাকে যোজন যোজন দূরত্ব তেমনি সংক্রামক ব্যধি কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে দূরত্ব বজায় রেখেও আমরা তার সাথে যোগ দিতে পারি তার সুস্থ হবার সংগ্রামে। তাই সচেতনতা মানে ঘৃণা নয়,সচেতনতা মানে বঞ্চনা নয়।সচেতনতা দুর্যোগ মোকাবিলার একটি হাতিয়ার মাত্র।আসুন সবাই এই হাতিয়ারের সুস্থ এবং সুষ্ঠু প্রয়োগে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হই। 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪