কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বলেছেন, বর্তমান সময়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বের পরিবেশ, মানুষের জীবন ও জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির সম্মুখীন। মানুষের জীবিকাও হুমকির সম্মুখীন। সেজন্য জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করতে হলে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে তার সরকারি বাসভবন থেকে কৃষি মন্ত্রণালয় (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী) মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান। সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় প্রথম ধাপে প্রত্যেক উপজেলায় ১০০ টি করে বৃক্ষরোপণ করবে। দ্বিতীয় ধাপে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে আরও ১০০টি করে বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি গ্রামে, ইউনিয়নে ও উপজেলায়-জেলায় দেশীয় ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগাতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ উদ্যোগের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সকল জনগণকে গাছ রোপণে উদ্বুদ্ধ করা হবে। পরে মন্ত্রী তার বাসভবন চত্বরে একটি কাজু বাদামের চারা রোপণ করে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
কৃষি মন্ত্রণালয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রথম ধাপে প্রত্যেক উপজেলায় ১০০ টি করে সারা দেশে প্রায় ৫০ হাজার বৃক্ষরোপণ করবে। দ্বিতীয় ধাপে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে আরও ১০০টি করে বৃক্ষরোপণ করা হবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে ফলদ, বনজ ও ঔষধির পাশাপাশি মশলা জাতীয় গাছ লাগানো হবে।
এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আউশ আবাদ হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আউশে ও আমনে অনেক সময় বন্যার কারণে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে বন্যার কারণে আমন ফসলটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় সব ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বিকল্প বীজতলা তৈরি, নিয়মিতভাবে আবহাওয়া মনিটরিং, ভারতের সাথে যোগাযোগসহ সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে যাতে করে বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতি মোকাবিলা করা যায়।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, কৃষিতে সম্ভাবনা অপরিসীম। সে সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। দানাদার খাদ্যে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় এখন মূল লক্ষ্য হলো কৃষিকে বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি বহুমূখীকরণ করা। কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানি বাড়াতে হবে। সেজন্য কাজু বাদাম, কফি, ড্রাগন ফল, গোল মরিচ প্রভৃতি অপ্রচলিত ফসলের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এগুলোর আবাদ ও রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
তিনি বলেন, এদেশের শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক কৃষিকাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের মাধ্যমেই কৃষিখাতে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে, কৃষি উন্নত ও আধুনিক হতে পারে। সেজন্য তরুণ প্রজন্মকে কৃষিকাজে সম্পৃক্ত হতে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।
কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রকোপের কারণে মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের কর্মসূচির অনেকগুলো আপাতত স্থগিত হলেও পরবর্তীতে পরিস্থিতির উন্নতি হলে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে ।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে আকাশমনি, মেহগনি, ইউক্যালিপটাস প্রভৃতি গাছ লাগানো যাবে না। দেশীয় ফলদ, বনজ, ঔষধি ও মশলা জাতীয় গাছ লাগাতে হবে। এসময় তিনি কাজু বাদাম চাষে আগ্রহ বাড়াতে প্রতিটি উপজেলা চত্বরে অন্তত ১টি করে কাজু বাদামের গাছ লাগানো হবে বলে জানান।
এ অনলাইন সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মো. মাহবুবুল ইসলাম, বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা,সংস্থাপ্রধানসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ১৪ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকগণ এ অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।