1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন

খাগড়াছড়িতে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন করছে কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র

  • সময় : রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০
  • ৫৩৮

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের একটি গ্রাম শিম্প্রু পাড়া। এটি জেলা সদর থেকে প্রায় ৬০ কি.মি. দুরে। এ এলাকার কৃষকরা সবজি, আম, কাঠাল, আনারস সহ অন্যান্য কৃষি পন্য উৎপাদনের সাথে জড়িত। কিন্তু বেশির ভাগ কৃষকই নিজে নিজে উৎপাদন করে এবং একক ভাবে বিক্রয় করে। একক বিক্রয় করার ফলে পণ্যের বাজার মূল্য সম্পর্কে যেমন কৃষকের ধারণা কম, তেমনি পরিবহন খরচ, রাস্তার অন্যান্য খরচ বাবদ অনেক টাকা ব্যয় হত ফলে কৃষকরা পন্য বিক্রয় করে লাভবান হতে পারত না।

২০১৯ সালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও এসআইডি-সিএইটি, ইউএনডিপির সহযোগিতায় যৌথভাবে বাস্তবায়িত কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের বাজার সংযোগ কার্যক্রমের আওতায় কৃষকদের সুবিধার্থে দলগত ভাবে পন্য একত্রিত করে বিক্রয় করার জন্য এলাকায় একটি কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র করে দেওয়া হয়।। এটি রক্ষনাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য কৃষিপন্য ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে ৫ জনের একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে। কমিটির মাধ্যমে কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে।

কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সভাপতি কৃষক ফোরকান আলী বলেন, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের আওতায় সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায়-কৃষক মাঠ স্কুল হতে আমরা দলগতভাবে গুনগত মানের পন্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সম্পর্কে প্রশিক্ষন পেয়েছি। প্রশিক্ষনের পূর্বে আমরা প্রত্যেক কৃষক পন্য নিয়ে বাজারে যেতাম এতে প্রত্যেক কৃষকের পরিবহন খরচ, বাজার ট্যাক্স সহ অন্যান্য খরচ বাবদ অনেক টাকা খরচ হতো যারফলে কৃষক লাভবান হতে পারত না। এছাড়াও কৃষকদের পণ্যের ভাল দাম প্রাপ্তির উপায় সম্পর্কে ধারণা না থাকায় ভালমানের পন্য ও খারাপ মানের পন্য একত্রে বিক্রয় করার কারণে পন্যর দাম একেক জন একেক রকম পেত এবং এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়িরা পন্যর ভাল দাম দিত না এতে এলাকার সহজ সরল কৃষকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঠকত। এখন আমরা পন্য নিয়ে সকল কৃষক বাজারে না গিয়ে কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্রে একত্রিত করি। পণ্য বাজারজাত করার পূর্বে পণ্যের গুনগত মান বৃদ্ধির জন্য পরিষ্কার করণ, বাছাই ও গ্রেডিং করে নিয়ে আসি এতে ভাল দাম পাওয়া যায়।

কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মো: রবিউল ইসলাম বলেন, বর্তমানে এ কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্রের সাথে প্রায় ১০টি গ্রামের প্রায় ১২০০ কৃষক পরিবার সম্পৃক্ত রয়েছে। গুনগত মানের পন্য উৎপাদন হওয়ায় খাগড়াছড়ি ও খাগড়াছড়ির বাইরের ব্যবসায়ীদের সংযোগ স্থাপন হয়েছে। এখান থেকে মোড়ক জাত করে আমরা দূরের বাজারে পণ্য সরবরাহ করি এতে পণ্য পরিবহনের সময় নষ্ট হয় না ফলে দাম ভাল পাওয়া যায়। এছাড়া কাছের বাজার সমূহে দ্রুত পচনশীল পন্য সমূহ সরবরাহ করা হয়। গত এপ্রিল-জুন এই তিনমাসে শিপ্রু পাড়া কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্রের মাধ্যমে ২ হাজার মন সবজি, ২০ লক্ষ পিস লিচু, ১ লক্ষ ২০ হাজার পিস কাঠাল, ১৮ শত মন আম এবং ১০ হাজার আনারস বিক্রয় হয়েছে যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র হওয়ার পূর্বেও আমরা সবজি ও ফল সহ বিভিন্ন পন্য বিক্রয় করতাম কিন্তু বাজার দর ও গুনগত মানের পন্য উৎপাদন সম্পর্কে ধারণা না থাকায় একেকজন একেক রকম দাম পেত। কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন হওয়ায় স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় ও জেলার বাইরের অনেক ব্যবসায়ী এখানে সবজি,কাঠাল,আম,আনারস ও লিচু ক্রয় করতে আসে। যার ফলে প্রতিযোগিতা মুলক বাজার তৈরী হয়েছে এবং কৃষকরা দাম পাচ্ছে।

ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, বলেন আমি এ মৌসুমে ২০-৩০ লক্ষ টাকার সবজি ও ফল ক্রয় করেছি যা স্থানীয় মানিকছড়ির তিনটহরী, গুইমারা বাজার সহ খাগড়াছড়ির বাইরে কুমিল্লা, ফেনী, ঢাকা, বড় বাজার গুলোতে সরবরাহ করেছি। ব্যবসায়ী আদম আলী বলেন, আমি এ বছর ১০-১৫ লক্ষ টাকার সবজি ও ফল ক্রয় করে চট্রগ্রাম,চাঁদপুর,নোয়াখালী,নরসিংদী এসকল বড় বাজারে সরবরাহ করেছি। আমার মত এখানে আরও ২০-২৫ জন ব্যবসায়ী রয়েছে যারা পন্য ক্রয় করে স্থানীয় বাজার ও বাইরের বাজারে সরবরাহ করে। বর্তমানে ব্যবসা করে আমি নিজে যেমন ভাল দাম পাচ্ছি তেমনি কৃষকরাও ভাল দাম পাচ্ছে। এরুপ কালেকশন পয়েন্ট আরও বৃদ্ধি করা হলে ব্যবসায়ীদের যেমন সুবিধা হবে তেমনি কৃষকদেরও পন্য বিক্রয় ও পন্যর ভাল দাম পাওয়া সহজতর হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মংপাইপ্রু মারমা বলেন, জেলা পরিষদ ও এসআইডি-সিএইচটি, ইউএনডিপির সহযোগিতায় কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্রটি স্থাপন হওয়াতে এখানকার কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন হতে চলেছে তবে এ ধরনের কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা দরকার। ভবিষ্যতে আমাদের প্রত্যাশা এই কালেকশন পয়েন্টের মাধ্যমে এই এলাকার কৃষকরা আরও বেশি পরিমান পন্য সরবরাহ করতে পারবে এতে বাহিরের ক্রেতা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি এই এলাকার কৃষকদের পন্য বিক্রয় ও ভাল দাম প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪