স্টাফ রিপোর্টার- ঈদ যাত্রায় লঞ্চে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে নৌ-পুলিশ। এছাড়া ঈদে নৌরুটে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ৬ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১১ দিন সম্পূর্ণভাবে বাল্কহেড চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ মার্চ) সকাল ১১ টায় নৌ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত আসন্ন পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে নৌ পথের আইন শৃংখলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক মত বিনিময় সভায় এসব কথা জানানো হয়।
এসময় নৌপুলিশ প্রধান বলেন, ঈদে নৌপথ ব্যবহারকারী ঘরমুখো মানুষের যাত্রা সহজ ও নিরাপদ করতে নৌ পুলিশ আগামী ৩ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের নৌপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে নৌ পুলিশ বদ্ধ পরিকর। পবিত্র ঈদে নৌ যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে নৌ পুলিশ সব নৌঘাট, নৌ টার্মিনালগুলোতে দায়িত্ব পালন করবে। নৌপথে নিরাপত্তা বিধানে সব নৌযানগুলোর চলাচলের বিষয়ে নৌ পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে।

তিনি উল্লেখ করে বলেন, সময়ের চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। কোনো নৌযান যেন প্রতিযোগিতামূলকভাবে বেশি যাত্রীবোঝাই করে বেশি স্পিড দিয়ে নৌযান না চালায়।
অতিরিক্ত আইজিপি আলীম মাহমুদ জানান, নৌপথে যেকোনো সমস্যায় নৌপুলিশের কন্ট্রোল রুমের নম্বর- ০১৩২০১৬৯৫৯৮ অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধম্যে নৌ পুলিশকে অবগত করলে নৌ পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ঘরমুখো যাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর উদযাপনে নৌপথ ব্যবহারকারী প্রত্যকেই যেন নিরাপদে তাদের পরিবার পরিজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে নৌপুলিশ সবসময়ই আপনাদের পাশে থাকবে।
সভায় লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা থেকে বিরত থাকা, ছোট ও ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চে যাত্রী পরিবহনে বিরত থাকা, লঞ্চে যাত্রী সংখ্যার আনুপাতিক হারে লাইফ জ্যাকেট, বয়া প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নৌযান চালানো, সূর্যাস্তের পর বালুবাহী বাল্কহেড ও স্পীড বোট চলাচল বন্ধ রাখা, ঈদ পূর্ববর্তী ৫ দিন, ঈদ এবং ঈদ পরবর্তী ৫ দিনসহ মোট ১১ দিন বালুবাহী বাল্ক হেড চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা, চাঁদাবাজি, চুরিসহ যেকোনো হয়রানি বন্ধে বিশেষ নজরদারি বৃদ্ধি করা, নৌযান চলাচলের পথে মাছ শিকারের জন্য জাল প্রতিরোধ করা, কাগজপত্র বিহীন কোনো নৌযান না চালানো, ন্যায্যমূল্যে ভাড়া আদায়ে তদারকি, টার্মিনাল ব্যতীত নদীর যেকোনো জায়গায় অন্য কোনো ছোট নৌযান থেকে যাত্রী উঠানো বা নামানো বন্ধ নিশ্চিতকরণ, সব নৌযানে পর্যাপ্ত ফায়ার ফাইটিংয়ের ব্যবস্থার বিষয়ে সার্বিক আলোচনা হয়।
এসময় বাংলাদেশ আভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন যাত্রী কল্যান সংস্থার সভাপতি সাবেক এসপি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, নৌ-পুলিশের তৎপরতার কারনে নৌ পথ আজ অনেকটাই নিরাপদ। নৌ পুলিশ দিনে দিনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমি মনে করি আরও একটু নজরদারি বাড়ালে নৌ পথে ডাকাতি ছিনতাই, ঘাটে চাঁদাবাজি, জুয়া বন্ধ করা সম্ভব।
বাংলাদেশ আভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন যাত্রী কল্যান সংস্থার সহ সভাপতি মো: বদিউজ্জামান বাদল বলেন, যাত্রীদের নিয়ে আসা লাগেজ কিংবা একটু ভারী ব্যাগ হলেই ঘাটে থাকা কুলিরা তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করে থাকে, এমনকি ৪টি মুরগী নিয়ে আসলেও সেখান থেকে তারা টাকা আদায় করে। এই বিষয়টি নৌ পুলিশ একটু নজরে আনলেই এর সমাধান সম্ভব। কুলিদের অবৈধ টোলবাজি বন্ধ করতেই হবে।
নৌ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বেপারী বলেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা অলরেডি আমাদের শ্রমিকদের বাল্কহেড চলাচলের বিষয়টি বলে দিয়েছি, ১১ দিন বাল্ডহেড চলাচলে নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে তিনি তরমুজ বাহী বাল্কহেড চলাচলে কোন স্যাক্রিফাইস করা যায় কিনা সেটি বিবেচনার অনুরোধ জানান।
তবে তার এই অনুরোধকে নাকচ করে নৌ পুলিশ প্রধান বলেন, “মন্ত্রনালয় যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটি মেনেই আমরা বাল্কহেড চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবো। কোন প্রকার বাল্কহেড ওই ১১দিন চলতে পারবে না।”
সভায় উপস্থিত বিআইডাব্লিউটিসি’র জেনারেল ম্যানেজার বলেন, পদ্মা সেতুর কারনে ফেরিতে কোন চাপ না থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। দ্রুত পারাপারের লক্ষে ৬টি ফেরিঘাট ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে, পুলিশকে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে। লোডিং আনলোডিং পয়েন্টে যাতে সমস্যা না হয় সেক্ষেত্রে পুলিশের ভুমিকাই সবচেয়ো বেশি।
নৌ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোহা: আবদুল আলীম মাহমুদের সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন নৌ-পুলিশের সকল ডিআইজিবৃন্দ, অতিরিক্ত ডিআইজিবৃন্দ, সকল নৌ অঞ্চলের পুলিশ সুপারগন, নৌ-পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ, লঞ্চ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ , বিআইডব্লিউটিএ এর প্রতিনিধি, নৌ শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ,
সভায় বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, বাঅনৌচ (যাপ), লঞ্চ মালিক সমিতি, নৌ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ নৌ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, কার্গো ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার বাল্ক হেড শ্রমিক ইউনিয়ন, লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন বাঘা বাড়ি, সুন্দরবন নেভিগেশন সদর ঘাট, এম কে শিপিং লাইন্সসহ নৌযান ও নৌপথের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও নৌ পুলিশের সব অঞ্চলের পুলিশ সুপারসহ নৌ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, যাত্রী হয়রানি বন্ধে এবং সেবার মান বাড়াতে বিআইডব্লিউটিএর একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। ১৬১১৩ নম্বরে যে কোন প্রয়োজনে ফোন দিয়ে সহায়তা নিতে পারবে যে কোন যাত্রী।