স্টাফ রিপোর্টার-
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মন্ত্রিসভার আকার বাড়ছে। মন্ত্রিসভায় যুক্ত হচ্ছেন আরও কয়েকজন নতুন সদস্য। আজ শুক্রবার তাদের শপথ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রধানমন্ত্রীর দিনের আলোচ্যসূচি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে বঙ্গভবনে শপথগ্রহণের প্রস্তুতির কাজও চলছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার ভাষ্য ছিল, মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়লে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হবে। সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত কাউকে শ্রম মন্ত্রণালয়ে দেখা যেতে পারে।
এরপর থেকে মূলত আলোচনার ডালপালা ছড়াতে শুরু করে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি ৩৬ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এই দুই
মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করা হতে পারে, এমন আলোচনা আছে। বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী বাদে পূর্ণ মন্ত্রী রয়েছেন ২৫ জন এবং প্রতিমন্ত্রী ১১ জন। এই মন্ত্রিসভায় এ পর্যন্ত কোনো উপমন্ত্রী নেই। গত মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ২০ জনের মতো। ৩ জন উপমন্ত্রী ছিলেন। সব মিলিয়ে আগের মন্ত্রিসভা ছিল ৪৯ সদস্যের। এবার প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী মিলিয়ে ১১ জনকে আনা হতে পারে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যারা সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হয়েছেন, তাদের মধ্যে থেকে তিন-চারজন মন্ত্রিসভায় আসতে পারেন।
মন্ত্রিসভায় কজন নতুন সদস্য আসতে পারেন, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলে নানা রকম আলোচনা আছে। কেউ বলছেন, ১০ থেকে ১২ জন, আবার কেউ বলছেন ৬ জন। তবে সংখ্যা যাই হোক, প্রত্যেক সদস্যের স্বতন্ত্র পরিচয় আছে, সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতা আছে, সততার প্রশ্নে উত্তীর্ণ এমন ব্যক্তিদের মন্ত্রিসভায় আনা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। তাদের ভাষ্য, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারঙ্গম ব্যক্তি, শ্রম ও শিল্প এবং সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের এনে আগামীর বাংলাদেশ গঠনে কাজ করবে সরকার। আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, দলের ইশতেহার বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার তা নিতে কার্পণ্য করবেন না।
গুঞ্জন আছে, নারী মন্ত্রী আসতে পারে শ্রম মন্ত্রণালয়েও; সেটা হতে পারে চট্টগ্রাম বিভাগের কেউ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও একজন একজন নারী আসতে পারেন, এমন আলোচনা আছে। তাকে আনা হতে পারে বরিশাল বিভাগ থেকে।
আমলাদের মধ্যে একজনকে অর্থ বা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের একজন সংসদ সদস্য এবং চট্টগ্রামের সংরক্ষিত নারী আসনের একজনকে নতুন মুখ হিসেবে দেখা যেতে পারে বলে একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে। সাবেক মন্ত্রীদেরও কেউ কেউ মন্ত্রিসভার নতুন সদস্য হয়ে আসতে পারেন।
এসব আলোচনা ও গুঞ্জনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারছি না।’
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ জন।
১০ জানুয়ারি শপথ নেন নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। শপথ শেষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মতি দেন রাষ্ট্রপতি। ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন।