স্পোর্টস ডেস্ক-
কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল উরুগুয়ে। ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে কলম্বিয়ার মুখোমুখি হবে তারা।
গোলশূন্য সমতায় খেলার মূল সময় শেষ হওয়ার কারণে টাইব্রেকার শ্যুটআউটের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। এখানে গিয়েই খেই হারিয়ে ফেলে ব্রাজিল। প্রথম ৩ শ্যুটের ২টিই মিস করে ব্রাজিলিয়ানরা। অন্যদিকে প্রথম ৩ শ্যুটআউটেই সাফল্য দেখায় উরুগুয়ে। চতুর্থ শ্যুট উরুগুয়ে মিস করলেও পঞ্চম শ্যুট উরুগুয়ের জয় নিশ্চিত করে ম্যানুয়েল উগার্তে।
মূলত টাইব্রেকারের স্নায়ুচাপ সামলাতে পারেনি ব্রাজিল। কাতারা বিশ্বকাপের পর থেকেই নিজেদের ছন্দ খুঁজে ফেরা দলটি লাস ভেগাসের অ্যালিগায়েন্ট স্টেডিয়ামেও ভিন্ন কিছু করতে পারেনি। টাইব্রেকারে উরুগুয়ে জিতেছে ৪-২ গোলে।
প্রথম টাইব্রেকার শট নিতে আসেন ফেদে ভালভার্দে। কোনো ভুল করেননি তিনি। বামপ্রান্তে ঝাঁপ দিয়েছিলেন অ্যালিসন বেকারও। কিন্তু বলের নাগাল পাননি। ব্রাজিল প্রথম শটটাই মিস করে, এদের মিলিতাওয়ের শট ফিরিয়ে দেন উরুগুয়ে গোলরক্ষক সের্হিও রোচেত। উরুগুয়ে দ্বিতীয় শটেও সফল হয়। আন্দ্রেস পেরেইরা ব্রাজিলের আশা বাঁচিয়ে রাখেন দ্বিতীয় শট নিতে এসে।
তৃতীয় শটেও গোল পায় উরুগুয়ে, ব্রাজিল আবার মিস করে। ফলে অনেকটা ছিটকেই যায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু অ্যালিসন উরুগুয়ের চতুর্থ শট ফিরিয়ে ব্রাজিলের আশা বাঁচিয়ে রাখেন। গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লিও হতাশ করেননি। কিন্তু পঞ্চম শট নিয়েই ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দেয় উরুগুয়ে। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয় ব্রাজিল।
২০১৯ সালে সবশেষ কোপা আমেরিকা জিতেছিল ব্রাজিল। তারপর থেকে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের গল্পটা শুধুই হতাশার। ২০২১ সালে কাছাকাছি গিয়েও পারেনি শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে।
ব্রাজিলের ওপর প্রথমার্ধ থেকেই চড়াও হয়ে খেলতে থাকে উরুগুয়ে। ১৮ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল উরুগুয়ে। দলটির ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ম্যানুয়েল উগার্তে ডান পায়ে শট নিলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। ১৯ মিনিটে ডারউইন নুনিয়েজের হেডে করা শট প্রতিহত হয় ব্রাজিলের রক্ষণ দেওয়ালে। এবার অ্যাসিস্ট করেন উগার্তে।
সুযোগ হারাতে না হারাতেই আবার সুযোগ পেয়ে যায় উরুগুয়ে। ১৯ মিনিটে নিকোলাস দে লা ক্রুজের কর্নার থেকে বল রিসিভ করেন ম্যাথিয়াস অলিভেরা। তবে অলিভেরার হেড গোলবারের অনেক ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৩৫ মিনিটে নুনিয়েজ হেড দিলেও আবার তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৩৮ মিনিটে উরুগুয়ের রক্ষণ দুর্গে হানা দিলেও সফল হতে পারেননি রদ্রিগো। ঠিক তার পরের মিনিটে ফাউলের কারণে হলুদ কার্ড দেখেন লুকাস পাকেতা।
প্রথমার্ধের শেষের দিকে খেলা আরও জমে ওঠে। ৪৩ মিনিটে উগার্তের পাস রিসিভ করেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার দে লা ক্রুজ। প্রথমার্ধের খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে ব্রাজিল। ৪৫ মিনিটের পর অতিরিক্ত দ্বিতীয় মিনিটে ব্রুনো গুইমারেসের পাস থেকে উরুগুয়ের লক্ষ্য বরাবর শট নেন রাফিনহা। তবে উরুগুয়ের গোলরক্ষক সার্জিও রোচেত সেই শট প্রতিহত করেন। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য ড্রয়ে।
প্রথমার্ধ শেষ হতে না হতেই আক্রমণ শুরু করে উরুগুয়ে। ৪৮ মিনিটে দলটির মিডফিল্ডার ফেডেরিকো ভালভার্দের শট প্রতিহত করেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক আলিসন বেকার। ৫৩ মিনিটে উরুগুয়ের ম্যানুয়েল উগার্তে হলুদ কার্ড দেখেন হ্যান্ডবলের জন্য। এক মিনিটের মধ্যে আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় উরুগুয়ে। ডিফেন্ডার সেবাস্তিয়ান ক্যাসেরেসের হেড প্রতিহত হয় ব্রাজিলের রক্ষণ দেওয়ালে। ক্যাসেরেসের কর্নার থেকে পরে এরপর উরুগুয়ের ফরোয়ার্ড ম্যাক্সিমিলানো আরাউহো শট নিলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। ৫৭ মিনিটে ম্যাক্সিমিলানো আরও একটি সুযোগ হাতছাড়া করেন। এবার তিনি শট মেরেছেন বক্সের ওপর দিয়ে মেরে।
৭৪ মিনিটে নাহিতান নান্দেজ লাল কার্ড দেখলে উরুগুয়ে ১০ জনের দলে পরিণত হয়। তবু দমে যায়নি তারা।