রমজান মাসের ফরজ রোজার পর শাওয়াল মাসের ছয়
রোজাকে ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। মহানবী (সা.) এই ছয়টি রোজা পালন করলে পূর্ণ এক বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখা মুস্তাহাব। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই রোজাগুলো রাখার ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। তিনি নিজেও শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে তা পালনে উৎসাহিত করতেন।
ছয় রোজার মর্যাদা : শাওয়াল মাসের ছয় রোজার মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণ বছরই রোজা রাখল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪)
অপর বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে, সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৫/২৮০)
উবায়দুল্লাহ বিন মুসলিম আল-কুরাইশি (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সারা বছর রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবার-পরিজনের হক রয়েছে। অতঃএব তুমি রমজান মাস ও এর পরবর্তী মাসে (শাওয়াল) রোজা রাখবে এবং প্রত্যেক বুধ ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখবে। এই পদ্ধতি মানলে তুমি সারা বছর রোজা রাখলে এবং রোজা ভেঙে ফেলার সুযোগ পেলে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৮)
এক বছরের সমান হয় যেভাবে : রাসুলুল্লাহ (সা.) এক বছরের সমান হওয়ার বিষয়টিও ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য, আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এই হলো এক বছরের রোজা।’ (সুনানে নাসায়ি : ২/১৬২)
মুহাদ্দিসরা বিষয়টি আরো ব্যাখ্যা করে বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন ‘কেউ কোনো সৎকাজ করলে সে তার ১০ গুণ সাওয়াব পাবে এবং কেউ কোনো অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৬) এই হিসাবে রমজানের ৩০ রোজায় ৩০০ রোজার সওয়াব হয়। আর শাওয়ালের ছয় রোজায় ৬০ রোজার সওয়াব হয়। এভাবে রমজানের ৩০ রোজা ও শাওয়ালের ছয় রোজা মোট ৩৬০ রোজার সমপরিমাণ হয়।
ছয় রোজা রাখার নিয়ম : শাওয়াল মাসের যেকোনো সময় এই রোজা আদায় করা যায়। ধারাবাহিকভাবে বা বিরতি দিয়েও আদায় করা যায়। শাওয়াল মাসে শুরু করে শাওয়াল মাসে শেষ করাটাই আসল কথা। তবে ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা যাবে না। এরপর শাওয়ালের প্রথম দিকে একসঙ্গে ছয়টি রোজা রাখাই উত্তম। যাদের রমজানের রোজার কাজা আছে, তারা আগে রমজানের রোজার কাজা আদায় করবে। অতঃপর সম্ভব হলে শাওয়ালের রোজা আদায় করবে।
রমজানের কাজা রোজা আদায় করতে করতে শাওয়াল মাস শেষ হয়ে গেলে অন্য মাসে শাওয়ালের রোজার নিয়ত করে রোজা রাখবে। আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে সাওয়াব থেকে বঞ্চিত করবেন না। শাওয়ালের রোজা পুরুষ, মহিলা, যুবক, বৃদ্ধসহ সবাই রাখতে পারে। সবার উচিত এই মর্যাদাপূর্ণ আমলে শরিক হওয়া। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।